ভারতের প্রয়োজন পাকিস্তানের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করা by লি কিংকিং

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করেছে। ফলে আঞ্চলিক পরিবেশের আরো অনিশ্চয়তা যোগ করেছে। ভারতের কাশ্মীর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

মোদি ভারত-পাকিস্তান সঙ্ঘাতকে বিজেপির ক্ষমতায় থাকার মর্যাদা সংহত করা ও ভারতীয় জনগণের হৃদয় জয় করার কাজে ব্যবহার করছেন। মোদি ও তার বিজেপি দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ জাগিয়ে তুলছেন। ২০১৯ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনের সময়ই বিজেপি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মে মাসে মোদির বিপুল বিজয়ের প্রায় তিন মাস পর এখন মনে হচ্ছে, তারা ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে চলেছে। আবারো ভারতে জাতীয়তাবাদ সফলভাবে কষাঘাত করছে।

অবশ্য মোদির একতরফা ঘোষণার ফলে এই অঞ্চলে আরো সঙ্ঘাত উস্কে দেবে। কাশ্মীরে সঙ্ঘাত বৃদ্ধির ফলে ভারতের নিরাপত্তাও মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আগে কাশ্মীরের ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয় ভারত, কারফিউ জারি করে। এখন অঞ্চলটি পুরোপুরি অচল হয়ে আছে। পরিস্থিতি যদি জটিল হতে থাকে এবং চরম আকার ধারণ করে, তবে তা মোদির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারত সরকারের কাশ্মীর পদক্ষেপ চীনকেও অসন্তুষ্ট করেছে। কারণ অঞ্চলটির পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে চীন-ভারত সীমান্ত। ভারত ইচ্ছামতো আইন পরিবর্তন করে চীনের ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করতে পারে না।

চীন কোনো পক্ষ নেবে না, ভারত-পাকিস্তান বিরোধে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে এর মানে এই নয় যে চীন তার জাতীয় স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সুযোগ দেবে ভারতকে। ভারতের পদক্ষেপের ফলে চীন ও ভারতের মধ্যে অনেক পরিশ্রমে গড়ে ওঠতে থাকা সম্পর্কে নাশকতা সৃষ্টি করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিঙ মঙ্গলবার বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য, প্রয়োগ করা উচিত হয়নি। চীন সবসময় তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে, ভারতকে তার খেয়ালখুশিমতো যা ইচ্ছা করার সুযোগ দেয়নি।

ভূখণ্ডগত ও ঐতিহাসিক বিরোধ শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত। কয়েক দশক ধরে চলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কাশ্মীর নিয়ে বিরোধে মধ্যস্ততা করার জন্য কয়েকটি দেশ প্রস্তাব দিয়েছ। কিন্তু ভারত সবসময়ই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন দেশটি একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, হঠাৎ করেই স্থিতিবস্থা পরিবর্তন করেছে। এর ফলে আরো বিরোধিতারই সৃষ্টি হবে।

একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও জাতীয়তাবাদকে উস্কে দেয়ার বদলে ভারতের উচিত অচলাবস্থা নিরসনের একটি পথ খুঁজে বের করা। অন্য কথায় বলা যায়, কাশ্মীরে উত্তেজনা ভারত বাড়াবেই, কমাবে না। ভারতের উচিত হবে তার কাশ্মীর কৌশল নিয়ে চিন্তা করা, কাশ্মীর পরিস্থিতিকে জটিল করা বন্ধ করা। বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে কাজ করা হলে তাতে কারো কল্যাণ হয় না।

ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাকিস্তানের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ইস্যুটির সমাধান করা। ভারত এখন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততা প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু তার প্রয়োজন শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যাটির সমাধানের উপায় খোঁজা। ভারত-পাকিস্তান সঙ্ঘাত সাত দশকের বেশি সময় ধরে চলছে। এটি কি আরো এক বা দুই শ’ বছর স্থায়ী হতে দেয়া উচিত হবে?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী যেই হোন না কেন, তিনি যদি এই অঞ্চলের সঙ্ঘাত অবসান ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে তিনি বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রেখে যাবেন।

No comments

Powered by Blogger.