ব্যক্তিগত বাড়ির ছাদে হেলিপ্যাড by দীন ইসলাম

ব্যক্তিগত বাড়ির ছাদে হেলিপ্যাড করার অনুমতি দেয়া হবে। তবে ভবনটি অবশ্যই হেলিপ্যাড ব্যবহারের উপযোগী হতে হবে। এজন্য বুয়েট থেকে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট নিতে হবে। সার্টিফিকেট ছাড়া হেলিপ্যাড স্থাপনের অনুমতি দেয়া হবে না। এছাড়া দেশের যে কোন খোলা জায়গায় হেলিপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এ সংক্রান্ত নীতিমালা বানাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে হেলিপোর্ট নির্মাণের অনুমতি দেয়া হবে। এজন্যও নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নীতিমালা তৈরি নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে নীতিমালার খসড়া যাচাই বাছাই করা হয়। বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স) উইং কমান্ডার চৌধুরী এম জিয়াউল কবির মানবজমিনকে বলেন, হেলিপোর্ট নির্মাণ ও হেলিপ্যাড স্থাপনের নীতিমালা চূড়ান্ত করার জন্য প্রাথমিক বৈঠক চলছে। আরও যাচাই বাছাই শেষে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এদিকে তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক স্থাপনা তৈরির জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে ফেলতে হচ্ছে সব বেসরকারি হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের হ্যাঙ্গার কমপ্লেক্স। বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে বেসরকারি খাতে হেলিপোর্ট ও অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। এরপর বেবিচকের পক্ষ থেকে প্রাথমিক পরিদর্শন হয়। এরপরই হেলিপোর্ট নির্মাণে নীতিমালা তৈরির উপর জোর দেয় বেবিচক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনাল সমপ্রসারণের কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সব হেলিকপ্টার সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থাপনা স্থানান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এজন্য বসুন্ধরা গ্রুপ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাঁচ নটিক্যাল মাইল পূর্ব দিকে প্রথম বেসরকারি হেলিপোর্ট ও অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স স্থাপন করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের জমির পরিমাণ ৭ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় আগামী ২৫ বছর মেয়াদে ভবিষ্যৎ সমপ্রসারণসহ বাংলাদেশে পরিচালিত সব হেলিকপ্টার প্রতিষ্ঠানের স্থাপনার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রকল্পটিতে। একই সঙ্গে ফ্লাইট অপারেশন, অফিস ও বাণিজ্যিক স্পেস, এমআরও প্রতিষ্ঠান, একাডেমিক ইনস্টিটিউট ইত্যাদি থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার সেবা প্রদানের অন্যান্য সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে ওই হেলিপোর্ট ও অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্সে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে বেসরকারি হেলিকপ্টার প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯৭ বর্গফুট জায়গায় তাদের হ্যাঙ্গারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাণিজ্যিকভাবে বর্তমানে আটটি কোম্পানি হেলিকপ্টার ব্যবসা করছে। এগুলো হচ্ছে শিকদার গ্রুপের আরঅ্যান্ডআর এভিয়েশন, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস, ইমপ্রেস এভিয়েশন, বিআরবি এয়ার, মেঘনা এভিয়েশন, পারটেক্স অ্যারোটেকনোলজি, স্কয়ার এয়ার, বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ ও সাউথ এশিয়ান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক হেলিকপ্টার রয়েছে শিকদার গ্রুপের।
তাদের বিভিন্ন মডেলের সাতটি হেলিকপ্টার রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সেবা চালু করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস। ২০০৮ সাল পর্যন্ত মাত্র দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ সেবা প্রদান করত। বর্তমানে লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় আছে আরো বেশ কয়েকটি কোম্পানি। সাধারণত রাজনৈতিক কর্মকান্ড, বিত্তবানদের বরযাত্রা ও ভিআইপি যাত্রী বহনে হেলিকপ্টারের ব্যবহার বেশি হয়। এছাড়া জরুরি মিটিং, দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো, লিফলেট বিতরণ, রোগী বহন, শুটিং, মরদেহ বহনসহ বিভিন্ন কাজেও এখন হেলিকপ্টার ব্যবহার হচ্ছে। যানজটের ঝামেলা এড়াতে ও ঢাকার বাইরে মিটিংয়ে যেতে অনেক ব্যবসায়ী এখন নিয়মিত হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা ঢাকার বাইরে গাজীপুর ও চট্টগ্রামে বিদেশী ক্রেতাদের নিয়ে কারখানা পরিদর্শনে হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভর করছেন। প্রতিদিনই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জেনারেল এভিয়েশন হ্যাঙ্গার থেকে যাত্রীরা হেলিকপ্টারে ওঠেন এবং এখানেই অবতরণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.