তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

কন্যা ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের কাছে নিগৃহীত সামসুন নাহার তসলিম নিজ বাড়িতে ফিরতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আকুতি জানান সামসুন নাহার। ব্যারিস্টার তুরিনের অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়ায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। নিজ মেয়ের কাছে নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে তুরিন আফরোজের মা সামসুন নাহার তসলিম বলেন, এখানে-  সেখানে ঘুরে বেড়াই। আমি আমার দেশ ছেড়ে এ বয়সে কেন বিদেশে পড়ে থাকবো? এ দেশ আমার জন্মস্থান ও আমার ৪৮ বছরের সংসার। আমি তো এখানেই থাকতে চাই। আমি আমার সংসারে ফিরে যেতে চাই। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আজ দুই বছর তিন মাস ১৯ দিন ধরে আমি আমার বাসার বাইরে। আমার স্বামী মারা যাওয়ার ১৮ দিন পর আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয় তুরিন। আমার দোষ তার কিছু আচরণের প্রতিবাদ করা। যেমন, ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে সবসময় ভাড়ার টাকা আমিই নিতাম। আমার স্বামী অবসরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়ি ভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার ও ওষুধের খরচ চলতো। এরপর ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তুরিন বাসা ভাড়ার টাকা জোর করে নিয়ে নেয়। অপরিচিত লোকদের রাত-বিরাতে ঘরে প্রবেশ করানো নিয়ে দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে, তুরিনের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া লাগতো। এসব বিষয়ে নিষেধ করলে ডিজিএফআই, র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম করে সে ভয় দেখাতো এবং বলতো ‘ওরা সবাই তার বন্ধু।’ কোনও কিছু বললেই ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার করানোর ভয় দেখাতো।
সামসুন নাহার তসলিম বলেন, আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেন না। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। আমি আজ মিডিয়ার মাধ্যমে উনার সহযোগিতা কামনা করছি। আমার শরীর ভীষণ খারাপ। ৬৫ শতাংশ কিডনি অকেজো। সঙ্গে আবার ডায়াবেটিকস আছে। ওষুধ কেনার পয়সা বাড়িভাড়া থেকে পেতাম, সেটাও সে কেড়ে নিয়েছে। দেশে থাকার জায়গা নেই।
তিনি বলেন, আমি তো ধারা বুঝি না। তুরিন আরও বলতো, পৃথিবীর যেখানেই থাকো সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসবো। আর তার গানম্যান দিয়ে ভয় দেখাতো। গ্রামের বাড়ি নীলফামারি যেতে পারি না। সে সেখানকার দায়িত্ব নিয়ে জমিজমা ও বাড়ি নিজের নামে কুক্ষিগত করেছে। প্রতিবাদ করলে কথায় কথায় বড় আপু (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ও ছোট আপুর (শেখ রেহানা) প্রসঙ্গ টানতো।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ শিশির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্ষমতার দাপটে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমাকে এবং আমার বিধবা মাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানি করে আসছে। তার কারণ একটিই, আর তা হলো, দেশে আমাদের সম্পদ কুক্ষিগত করা। চক্ষু লজ্জায় এতদিন বিষয়টি আড়াল করে রেখেছি। আমি ও আমার মা ক্ষমতাসীন কাউকে অবমাননা করতে চাইনি। একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বাসা থেকে আমাদের বের করে দেয়ার পরও রাজউকের কর ও ভূমি কর আমি নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছি। অথচ আমার অনুপস্থিতিতে তুরিন আফরোজ ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনকে সংবিধান বর্হিভূত কাজে বাধ্য করে আমাকে আর আমার মাকে ক্ষতি করছে। ব্যারিস্টার তুরিন শুধু ঢাকাতেই নয়, নীলফামারীতে আমাদের চাচাতো ভাইবোনদের জমিজমাও জিম্মি করে রেখেছে।
এর আগে, গত ১৪ জুন, নিজ বাড়িতে মা সামসুন নাহার তসনিম ও ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির বাসায় ঢুকতে না পেরে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করে। ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির এই জিডি করেন। তিনি বলেন, শুক্রবার কানাডা থেকে দেশে আসার পর আমরা উত্তরার বাসায় যাই। কিন্তু বোনের নির্দেশে বাসার দারোয়ান ও আনসারগণ আমাকে প্রবেশ করতে দেয়নি।

No comments

Powered by Blogger.