মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমাদের আস্থা রাখা দরকার: জয় গোস্বামী by অরুণাভ রাহারায়



‘এখনও যদি চুপু করে থাকি, এখনও যদি ঝাপিয়ে পড়তে না পারি– আমার সমস্তশিল্প আজ থেকে গণহত্যাকারী’ নন্দীগ্রাম গণহত্যার প্রেক্ষিতে শাসক দলের বিরুদ্ধে এই ছিল জয় গোস্বামীর বিধ্বংসী প্রতিবাদ। ফেসবুক-হোয়াটসয়্যাপে ভাইরাল হওয়ার যুগ আসেনি তখনও। ছিল না হাজারো লাইক শেয়ারের মাহাত্ম্য! অথচ জয়ের কবিতার এই লাইন মুখে মুখে ঘুরত সেই সময়।
এভাবেই জয় গোস্বামী বাম শাসকের বিরুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন তীক্ষ্ণ কলম। সেই সময় প্রকাশিত হয় তাঁর দুটি কবিতার বই ‘শাসকের প্রতি’ এবং ‘হার্মাদ শিবির’। বই দুটি প্রকাশ করেছিল বিজল্প প্রকাশনা। কলেজ স্ট্রিটের পাতিরাম ম্যাগাজিন বিপণি থেকে বই দুটি হু হু করে বিক্রি হয়ে যেত। সংবেদনশীল কবি জয় গোস্বামী এভাবেই কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন বাম সরকারের।
শুধু তাই নয়, কবি ছুটে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। কথা বলেছিলেন সেখানকার সাধারণ মানুষদের সঙ্গে। নন্দীগ্রাম গণহত্যা প্রসঙ্গে কবি জয় গোস্বামী বলেন, “নন্দীগ্রামে যে গণহত্যা হয়েছিল তাঁর পিছনে তৎকালীন সরকারের সমর্থন ছিল এবং সেখানে নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল। সেই ঘটনা বাংলার ইতিহাসে অত্যন্ত দুর্দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এর পর অনেক মানুষ প্রতিবাদে পথে নেমেছিল। আমাদের প্রতিবাদ সফল হয়েছিল। কারণ, পরবর্তী নির্বাচনে তৎকালীন সরকারের পতন হয়।”
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পছন্দ করতেন জয় গোস্বামীর কবিতা। নন্দীগ্রামের ঘটনার পর জয়, বুদ্ধবাবুকে নিশানা করে সংবাদপত্রে লিখেছিলেন– ‘এই মৃত নগরীর রাজা হয়ে তুমি কী করবে অয়দিপাউস?’ তার কিছুদিনের মাধ্যেই বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এলে তাঁকে নজরুল আকাদেমির সভাপতি করেন। কিন্তু বছর তিনেকের মধ্যেই জয় ফের শাসক দলের চৌহদ্দিতে হাঁপিয়ে ওঠেন। মমতার বিচার ব্যবস্থার প্রতি হয়তো-বা আস্থা হারাতে শুরু করেন! সেই সময় তাঁর কবিতার বইয়ের নামকরণ করেন ‘গরাদ, গরাদ’। বইটির কবিতাগুলি পড়লেই বোঝা যায় শাসকের প্রতি কতটা ক্ষভ জেন্মেছিল কবির মনে। তারও পরে প্রকাশিত অন্য একটি বইয়ের নাম রাখেন ‘সপাং, সপাং’ অর্থাৎ চাবুক! সে বইয়েও রয়েছে ক্ষমতার বিরুদ্ধে কবির ক্ষোভ।
পরে অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। সম্প্রতি ২৫ শে বৈশাখ উপলেক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কবি প্রণাম অনুষ্ঠানের দুজনকে পাশাপশি বসে কথা বলতে দেখা যায়। চলতি লোকসভা নির্বাচনে জয় বিজেপির সম্প্রদায়িকতার সমালোচনা করেন। কিছুদিন আগে কলকাতা প্রেসক্লাবে তৃণমূলপন্থী বিদ্বজনদের সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, “ধর্মে ধর্মে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এবং পরস্পরকে অবিশ্বাস করবার বীজ বিজেপি ছড়িয়ে দিচ্ছে। কালবর্গী, গৌড়ী লঙ্কেশের মতো মানুষকে খুন হতে হয়েছে। অসমে লক্ষ লক্ষ বাঙালির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
তবুও সংবেদনশীল কবি আশাবাদী। জয়ের মতে, “এই অবস্থায় একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এই অশুভ শক্তির বিরোধিতা করছেন। আমাদের ভরসা যে, আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো যোগ্য নেত্রী পেয়েছি আমাদের দেশে। এই সাম্প্রদায়িক এবং বিভেদগামী শক্তি ভয়ঙ্কর। এরা ভবিষ্যতে আমদেরও বিতারিত করতে পারে। এই অশুভ শক্তিকে আটকে দেওয়া সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমাদের আস্থা রাখা দরকার। সামনে ভোট। এই ভোটেই নির্ধারিত হবে মানুষের সুচিন্তা।”
kolkata24x7.com

No comments

Powered by Blogger.