সিলেটে মেডিকেলছাত্রী মিথিলার মৃত্যু নানা রহস্য by ওয়েছ খছরু

সিলেটে মেডিকেল শিক্ষার্থী মিথিলার মৃত্যু ‘রহস্যঘেরা’। নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এ মৃত্যুকে ঘিরে। এর আগে সিলেটের অন্য এলাকায় সংঘটিত হওয়া ডা. প্রিয়াংকার মৃত্যু নিয়েও রহস্য দেখা দেয়। তবে- পুলিশ প্রিয়াংকার ঘটনাটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে। মিথিলার ঘটনাটি এখনো ‘আত্মহত্যা’ বলে মনে করছে পুলিশ। তবে- পুলিশকে না জানিয়ে লাশ উদ্ধার এবং লাশের শরীরে নানা আঘাতের চিহৃই রহস্যের জন্ম দিয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে মিথিলার পরিবার চুপ। মিথিলার পুরো নাম ইশরাত জাহান মিথিলা। বয়স ২১ বছর। ডাক্তার হতে আরো প্রায় দুই বছর বাকী। পড়েন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় বর্ষে। ৫৬তম ব্যাচের ছাত্রী মিথিলা। তার পিতা ডা. আব্দুল হালিমও পেশায় একজন চিকিৎসক।
গত রোববার সকাল ১০টায় সিলেটের এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ হাসপাতালের মর্গ এলাকায় মিথিলার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করেন। এর আগে নগরীর মিয়া ফাজিলচিস্ত  এলাকার বাসা থেকে মিথিলাকে তার পরিবারের সদস্যরাই উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলো পড়ালেখার অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে মিথিলা আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের এই ধারণার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন- মিথিলা পারিবারিকভাবে নির্যাতনের শিকার ছিল। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা তার বড়বোন প্রায়ই তাকে নানা কারণে নির্যাতন করতেন। এ নিয়ে তাদের বাসায় ঝগড়াঝাটি লেগে থাকতো। প্রায়দিনই বাসা থেকে কান্নার আওয়াজ শোনতে পেতেন পাশের বাসার লোকজন। ঘটনার দিন মধ্যরাতেও চিৎকার চেঁচামচির আওয়াজ শোনা যায়। এদিকে মিথিলার মৃত্যুর পর প্রতিবেশিদের কাছে তার পরিবারের লোকজন একেক সময় একক কথা জানান।
পুলিশকে খবর না দিয়ে মিথিলা হার্ট এ্যাটাক করেছে এবং সঙ্গে বমি করছে বলে সকালে তাকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে ওসমানী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বলা হয় সে আত্মহত্যা করেছে। লাশ বাসায় থাকা অবস্থায় পুলিশে খবর না দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জানানো হয়। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ আত্মহত্যার খবর পেয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানান, রুমে থাকা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ‘আত্মহত্যা’ করে মিথিলা। রুমে সে একাই ছিল এবং দরজাও খোলা ছিল।
তারা পাখা থেকে নামিয়ে ভোরে হাসপাতালে নিয়ে যান। তার পরিচিতদের দাবি- একটি পাখায় ঝুলে একজন বয়স্ক মানুষের আত্মহত্যা সম্ভব নয়। এতে পাখা ভেঙ্গে যাবে, তা না হলে অন্তত বাঁকা হয়ে থাকার কথা। এমনকি লাশের জিব্বা বের হয়ে থাকবে। পা নিচের দিকেও ঝুলে থাকবে। কিন্তু মিথিলার ক্ষেত্রে তার কিছুই ছিল না। সহপাঠিরা জানান, মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে ময়না তদন্ত না করতে উচ্চ মহলে তদবির করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চাপে শেষ পর্যন্ত ময়না তদন্ত করে রাতে তারাবির নামাজের আধা ঘণ্টা আগে জানাজা শেষে নগরীর মানিকপীর টিলায় দাফন করা হয়। সুরতহাল প্রস্তুতকারী পুলিশ জানায়- মিথিলির দুই হাতে ৪টা চ্যাকা দাগের মতো ক্ষত ছিল। এ দাগগুলো সাধারণত ড্রাগ এডিক্টেটদের শরীরে পাওয়া যায়। তবে নির্যাতনের কারণেও এরকম দাগ পড়তে পারে। এয়ারপোর্ট থানার ওসি সাহাদত হোসেন জানিয়েছেন- ময়না তদন্তের রিপোর্ট ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে সবকিছু বিবেচনায় এটি আত্মহত্যা বলে মনে হওয়ায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। পরে হাসপাতালের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.