পাকিস্তানের যুবতীদের পাচার করতে চীনা পুরুষদের ফাঁদ!

শুক্রবার ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়েছে চীনা ২ জন পুরুষ ও পাকিস্তানের ৩ যুবতীকে। দেশটির ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানি এসব যুবতীকে চীনা ওই যুবকরা বিয়ের ফাঁদে ফেলে পাচার করছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তাদেরকে চীনে নিয়ে সেখানে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি অথবা অঙ্গহানি করে ব্যবসায় ব্যবহার করা হতো। এ অভিযোগে পাকিস্তানে চীনা দূতাবাস বলেছে, পাকিস্তান ও চীনের যৌথ তদন্তে এমন অভিযোগের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় নি। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের অনলাইন ডন।
এফআইএ শুক্রবার বিমানবন্দর থেকে একজোড়া দম্পতি ও একজন সিঙ্গেল যুবতীকে আটক করে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছে। তাদেরকে এফআইএ’র মানব পাচার বিরোধী সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত ইজাজ আহমেদ শাহ’র সঙ্গে দু’দফা বৈঠক করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
এ সময় তারা কথিত অভিযোগে চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রকাশ্যে জানানোতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চীন। চীন কর্তৃপক্ষ খুব পরিষ্কারভাবে বলেছে, যদি কোনো ব্যক্তিবিশেষ কোনো অন্যায় করে থাকেন তাহলে তা সংবাদ সম্মেলন করে জানানো উচিত ছিল না। কারণ, এতে তাদের দেশের দুর্নাম হয়।
এছাড়া শুক্রবার চীনা দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে তারা এ অভিযোগে তদন্ত করেছে। অভিযোগ আছে, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করতে অথবা অঙ্গহানি করে তা বিক্রির জন্য পাকিস্তানি নারীদের বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে চীনারা। এ অভিযোগ তদন্ত করে কোনো প্রমাণ মেলে নি। চীন দূতাবাস বলেছে, অভিযোগ তদন্তের জন্য চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি টাস্কফোর্স পাকিস্তানে পাঠিয়েছে। তারা পাকিস্তানি আইনপ্রয়োগকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ মেলে নি।
দূতাবাসের এই বক্তব্য দৃশ্যত এফআইএ’র সঙ্গে সংঘাতময়। এফআইএ তার সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, কিভাবে প্রলুব্ধ করে পাকিস্তানি যুবতীদের বিয়ে করছে চীনারা। এরপর তাদেরকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে চীনে। সেখানে নিয়ে ব্যবহার করছে পতিতা হিসেবে। তবে চীনা দূতাবাস বলেছে, তাদের অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে।
সূত্র বলেছে, আটক চীনা নাগরিকরা ‘পৌঁছামাত্র বিজনেস ভিসা’য় পাকিস্তান সফর করছিলেন। ফলে তারা কেউই অবৈধ অভিবাসী নন। তারা পাকিস্তানে পৌঁছার পর স্থানীয় দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাকিস্তানি মেয়েদের প্রলুব্ধ করে বিয়েতে রাজি হতে।
চীন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের কেউ যদি চীনে গ্রেপ্তার হন তাহলে কর্তৃপক্ষ তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করে না। শুধু তাদেরকে দক্ষিণ এশিয়ান হিসেবে প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে চীনা নাগরিকদের নাম প্রকাশ করে দেয়ায় অসন্তুষ্ট চীন।
এয়ার চায়না সিজেড-৬০০৮ ফ্লাইটে করে চীন যাওয়ার পথে শুক্রবার এফআইএ ওই দুই দম্পতি ও একজন সিঙ্গেল যুবতীকে আটক করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন ঝেং ঝিলি এবং লাহোরের যুবতী সামরিন ফাতিমা। তারা দম্পতি পরিচয় দিয়েছেন। অন্যদিকে গুও ওয়েনচাও এবং রাওয়ালপিন্ডির যুবতী রাবিয়া নিজেদেরকে দম্পতি পরিচয় দিয়েছেন। সিঙ্গেল যুবতী লাহোরের মাসুমা কুলসুমকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তারা চীন সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথার্থ বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এফআইএর কাছে। মিসেস কুলসুম বলেছেন, তিনি চীন সফরের যাচ্ছিলেন সেখানে তার স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে।
ওদিকে এফআইএ তার সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, তারা চীনা তিনজন নাগরিক ও তাদের পাকিস্তানি পার্টনারদের ভুয়া বিয়ের অভিযোগে আটক করেছে। এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর থেকে কমপক্ষে দু’ডজন চীনা নাগরিককে আটক করেছে তারা।

No comments

Powered by Blogger.