প্রচারের শেষ বেলায় মোদি-দিদি জোর তরজা

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে প্রচারের সময়সীমা বৃহষ্পতিবার রাত ১০টায় কমিয়ে আনা হয়েছে। তার আগে শেষ বেলায় রাজ্যে বিভিন্ন জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বিদ্যাসাগর কলেজের বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙ্গা নিয়ে দিন ভর তরজা চলেছে। গত মঙ্গলবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর রোড শো চলাকালীন স্থানীয় একটি কলেজের মধ্যে থাকা বিদ্যাসাগরের মূর্তি কে বা কারা ভেঙে দিয়েছে। এদিন উত্তরপ্রদেশ থেকেই মোদি মূর্তি ভাঙার সব দায় চাপিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের উপরে। উত্তরপ্রদেশের মউয়ের সভায় মোদি বলেছেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি তৈরি করে দেবেন তাঁরা, তেমনই মথুরাপুরের সভা থেকে মমতা পত্রপাঠ ফিরিয়ে দিয়েছেন সেই প্রস্তাব। মোদি বলেছেন, ‘তৃণমূলের গুন্ডারা’ মূর্তি ভেঙেছে। পাল্টা অমিত শাহকেই গুন্ডা বলেছেন মমতা। এই তপ্ত রাজনৈতিক বাক্য বিনিময়ের মধ্যেই বৃহষ্পতিবার বিকেলে মথুরাপুরে মোদি ফের বলেছেন, তৃণমূলের গুন্ডারাই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। এই মূর্তি যারা ভেঙেছে, তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি হওয়া দরকার। রাজ্যে প্রচারে এসে মমতা এবং তাঁর দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সারদা-নারদা নিয়ে বরাবরই সরব হয়েছেন মোদি-অমিত শাহরা। এ দিন মথুরাপুরের সভা থেকে সেই চিট ফান্ড এবং ঘুষকান্ডের সঙ্গে যোগ করেছেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা কান্ডকেও।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তৃণমূলের গুন্ডারা মূর্তি ভেঙেছে। সিসিটিভি ফুটেজেও সেটা রয়েছে। কিন্তু মমতার সরকার সারদা-নারদার মতোই সেই প্রমাণ লোপাট করছে। তবে মমতা এদিন দাবি করেছেন, বিদ্যাসাগর কলেজে মূর্তি ভাঙার প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। বিজেপি অপপ্রচার চালাচ্ছে। যদি মোদি প্রমাণ করতে পারেন মূর্তি তৃণমূল ভেঙেছে তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। আর যদি মিথ্যে হয় তাহলে কান ধরে ওঠবোস করতে হবে মোদিকে। মমতা আরও বলেছেন, মোদি যতই মূর্তি গড়ে দেওয়ার কথা বলুন, তাঁর কাছ থেকে ভিক্ষে নেবে না বাংলা। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাই থাকবে, এটা ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতীক হয়ে থাকবে বলে মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা।
এদিনই মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে বলেছেন, ভোটের পরে স্ট্রং রুমে ইভিএম বদলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিজেপি। সেজন্য রাজ্যবাসীকে স্ট্রং রুমে কড়া নজর রাখার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন,  কেন্দ্রীয় বাহিনী মারতে এলে ভয় পাবেন না। মা বোনেরা সামনে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাবেন। মা-বোনেদের নিয়ে মহিলা বাহিনী গড়ে দেবার কথাও তিনি ঘোষণা করেছেন। এদিকে মোদি এদিন পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে এসে ‘স্পিডব্রেকার দিদি’র পর এবার ‘স্টিকার দিদি’ বলে আক্রমণ করেছেন মমতাকে। মোদীর অভিযোগ, কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি নিজের বলে চালাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ কেন্দ্রের প্রকল্পে রাজ্যের স্টিকার সাঁটিয়ে দিচ্ছেন। সেই কারণেই মমতাকে ‘স্টিকার দিদি’ সম্বোধনে বিঁেধছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন রাতে দমদমের সভা থেকে মোদি মমতার সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, রাজ্যে গণতন্ত্রকে খতম করেছে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের রাজনীতি করারও অভিযোগ করেছেন মোদি। সেই সঙ্গে মোদি এদিন বলেছেন, রাজ্যের মানুষ যেভাবে বিজেপির প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছে তাতে বাংলাই বিজেপিকে তিনশো আসনের লক্ষ্য মাত্রায় পৌঁছে দেবেন। এদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরিটিক্যাল টেররিস্ট বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতা পলিটিক্যাল টেররিজম চালাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.