শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়ার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন

ম্যালেরিয়া থেকে শিশুদের আংশিক সুরক্ষা দিতে বিশ্বে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হতে যাচ্ছে। মশাবাহিত এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফ্রিকার দেশ মালাওয়িতে ব্যাপক হারে পরীক্ষামূলকভাবে এই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হচ্ছে। এর আগে ছোট পরিসরে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, আরটিএস, এস ভ্যাকসিনটি ম্যালেরিয়া জীবাণু থেকে রোগ সংক্রমণে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। ম্যালেরিয়া মশার কামড় থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে ছোট পরিসরে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে দেখা গেছে, ৫ থেকে ১৭ মাস বয়সী যে শিশুদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তাদের ৪০ শতাংশ ম্যালেরিয়া থেকে সুরক্ষিত ছিল।
ভয়াবহ এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফলতার এক দশক পর তা আবারও বেড়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আর কমছে না। এর পুনরুত্থানে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২১ কোটি ৯০ লাখ এবং মৃত মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৫ হাজার। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটো ক্ষেত্রেই ৯০ শতাংশের বেশি ঘটছে আফ্রিকায়। সেখানে বিশেষ করে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
মালাওয়িতে ২০১৭ সালে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আরটিএস, এস ভ্যাকসিন ব্যাপক হারে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ শুরু করার ক্ষেত্রে মালাউয়ির পাশাপাশি বেছে নেওয়া হয়েছে কেনিয়া ও ঘানাকে। ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহারে এই দেশগুলোকে বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে, দেশগুলো ইতিমধ্যে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করছে। মশারি ব্যবহারের ওপর জনসচেতনতা তৈরি করছে। তবে এরপরও দেশগুলোতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।
ভ্যাকসিনটি তৈরিতে তিন দশকেরও বেশি সময় লেগেছে। ওষুধ প্রতিষ্ঠান জিএসকের বিজ্ঞানীরা ১৯৮৭ সাল থেকে এটি তৈরি করছেন। পাথ ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভসহ বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় বছরের পর বছর ধরে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ১০০ কোটি ডলার।
সবশেষ ভ্যাকসিনের এই পর্যায়ে কাজটির সমন্বয় করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির দাবি, এই প্রথম ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শিশুদের কিছু সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিনের সঙ্গে তুলনা করলে ৪০ শতাংশ কার্যক্ষমতা খুব বড় কিছু নয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বলছে, আরটিএস,এস সুরক্ষামূলক আরও ব্যবস্থাও যুক্ত করবে। যেমন মশারি ব্যবহার, পোকামাকড় নিধন ইত্যাদি কর্মসূচি ইতিমধ্যে চলছে। এই ভ্যাকসিন পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে।
ভ্যাকসিনটি চারবার দিতে হবে। পরপর তিন মাসে একটি করে এবং চতুর্থ ডোজ দিতে হবে ১৮ মাস পর। পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন দেওয়ার এই পর্যায় ২০২৩ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কিছুদিনের মধ্যে এই কর্মসূচি কেনিয়া ও ঘানায় শুরু করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.