কালা মিয়ার কাটা পা এখনো উদ্ধার হয়নি

দিনদুপুরে শ’ শ’ লোকের সামনে পা কেটে নেয়া হয় কালা মিয়া (৪৫)-এর। একই সঙ্গে ছেলে বিপ্লব মিয়ার (১৯) দু’পায়ের রগও কেটে দেয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বর্বরোচিত এ ঘটনার নায়ক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ-সভাপতি আবুল বাশার। পুলিশ কেটে নেয়া ওই পা উদ্ধার করতে  পারেনি এখনো। গ্রেপ্তার হয়নি স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতা আর তার সহযোগীদের কেউই। ঘটনার শিকার কালা মিয়ার স্ত্রী সালমা আক্তার জানান, বাশারের হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন। জমির ধান কাটার জন্য ঘটনার ৩/৪ দিন আগে বাড়িতে আসেন। এরপরই এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ তাদের দুটি ঘরও আগুনে পুড়িয়ে দেয় বাশার। তবে বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশ ঠিক কি কারণে এ ঘটনা হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।  
রূপসদীর দক্ষিণ কান্দাপাড়ার মালন ফকিরের বাড়িতে শ’ শ’ লোকের সামনে কালা মিয়ার ডান পা হাঁটু বরাবর কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর ওই কাটা পা নিয়ে বীরদর্পে চলে যায় বাশার আর তার দলবল। স্থানীয় একাধিক সূত্র প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ১৯শে এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আবুল বাশার ও তার সহযোগীরা কালা মিয়া (৪৫) এবং তার ছেলে বিপ্লব মিয়াকে (১৯) বাড়ি থেকে ডেকে এনে প্রথমে টেঁটাবিদ্ধ করে। এরপর কালা মিয়াকে মাটিতে শুইয়ে ফেলে কোমরের ওপর উঠে বসে একজন। আরো কয়েকজন পা চেপে ধরলে দা ও চাপাতি দিয়ে হাঁটু বরাবর কুপিয়ে পা আলগা করা হয়। পায়ের হাড় আলাদা হওয়ার পর চামড়ার আবরণ টেনে ছিঁড়ে পা আলগা করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এসময় কালা মিয়ার ছেলে বিপ্লবের দুই পায়ের রগও কেটে দেয় তারা।
সালমা জানান, পায়ে কোপ দিতে থাকার সময় তারা বলতে থাকে কেউ যদি তাদের নাম বলে তাহলে তাদেরও এই পরিণতি করবে। সালমা বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাশারের সিমেন্ট ও বালু বিক্রির দোকানে তার ছেলে বিপ্লব কর্মচারী খাটতে রাজি না হওয়ায় সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি আরো জানান, গত ৩ মাস ধরেই তাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। এরপরই তারা ঢাকায় চলে যান। কালা মিয়া ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। দুজনেই এখন ভর্তি রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় গত রোববার আবুল বাশারকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নামে মামলা করেছেন কালা মিয়ার স্ত্রী সালমা আক্তার। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ১৫/২০ জনকে। তবে, ঘটনার পর ৪ দিন পার হলেও এখনো কালা মিয়ার কাটা পা উদ্ধার করতে পারেনি স্থানীয় পুলিশ। কোনো আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি।
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিশাল এলাকা। পা কেটে কোথায় রেখেছে সেটি তারা ট্রেস করতে পারছেন না। বাশারসহ মামলার আসামিদের ধরার জন্যও চেষ্টা করছেন তারা। জেলার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে তৎপর। তারা বাঞ্ছারামপুর ঘুরে গেছেন। র‌্যাবও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.