প্রেমিকার টোপে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার জুয়েল

মোবাইল ফোনে প্রেমিকার শারীরিকভাবে মিলিত হওয়ার ডাক পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন নাসিরনগরের জুয়েল মিয়া (২৬)। এই হত্যারহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত জুয়েলের প্রেমিকা আসমা খাতুন (২৪) আর তার স্বামী হারুন মিয়া (৩০)কেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে  এক সংবাদ সম্মেলনে এর বিস্তারিত জানিয়েছেন জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরো ৫ জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
স্থানীয় চাপরতলা বউবাজারে চা খেতে যাচ্ছে বলে ১৪ই মার্চ রাত ৯ টার দিকে ঘর থেকে বের হয়ে যান জুয়েল। এর ৫ দিন পর ১৯শে মার্চ গ্রামের একটি কচুরীপানা ভর্তি ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। গলা এবং পা শক্ত করে বাধা এবং অর্ধ পচা অবস্থায় পাওয়া যায় জুয়েলের লাশ।
জুয়েল নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা গ্রামের আনব আলীর ছেলে। তার চাচা আবদুল হক প্রকাশ ছুট্টু মিয়া এ হত্যা ঘটনায় ওইদিনই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে একই গ্রামের আলতাব আলীর ছেলে হারুন মিয়া (৩০) ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন (২৪) এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে শনাক্ত করে। এরপরই তাদেরকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করে। হারুন মিয়াকে ৮ই এপ্রিল ভোররাতে চট্টগ্রাম আনোয়ারা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হারুন হত্যাকাণ্ডে স্ত্রীসহ তার নিজের এবং অপরাপর আরো ৫ জন জড়িত বলে জানায়। পুলিশ হারুনের দেয়া তথ্যমতে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে জুয়েল মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইলটি উদ্ধার করে। তার তথ্যের ভিত্তিতে ৯ই এপ্রিল চাপরতলায় অভিযান চালিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে স্ত্রী আসমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আসমাও পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান- হারুন মিয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে জুয়েল মিয়ার বেশ সুসম্পর্ক ছিল। হারুন চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিভিন্ন কসমেটিক্‌স ফেরি করে বিক্রি করেন। আর বাড়িতে স্ত্রী আসমা একাই থাকতেন। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আসমার সঙ্গে ডেকোরেটর্স কর্মী জুয়েল মিয়ার পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁদের দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জুয়েল পরিচয়ের প্রথমে আসমাকে ভাবী বলে সম্বোধন করলেও পরবর্তীতে ধর্মবোন বানিয়ে সম্পর্ক গভীর করে। জুয়েল মিয়া ও আসমা খাতুনের এই সম্পর্ক শারীরিক সম্পকের্র দিকে গড়ায়।
বেশ কয়েকবার তারা শারীরিকভাবে মিলিত হয়। বিষয়টি হারুন টের পায়। এরপরই আসমা খাতুনের পিত্রালয়সহ বেশ কয়েকজনের নিকট বিচার দাবি করে সে। কিন্তু জুয়েল ও আসমা খাতুনের এই সম্পর্ক চলমান থাকলে হারুন অপরাপর আসামিদেরকে নিয়ে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। শারীরিকভাবে মিলিত হবে বলে হারুনের কথামতো আসমা ফোন দিয়ে গত ১৪ই মার্চ রাত ১০ টার দিকে জুয়েলকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। হারুন পূর্বপরিকল্পনা মতো আসমা খাতুন ও অপরাপর আসামিদের সহযোগিতায় প্রথমে মাথায় আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয় জুয়েলকে। এরপর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো চাকু ও সুঁচালো লোহা দিয়ে ঘাই মেরে হত্যা নিশ্চিত করে। পরে পা বেঁধে চাপরতলা গ্রামের খন্দকার বাড়ি সংলগ্ন পশ্চিমের কচুরিপানা ভর্তি ডোবায় মরদেহ ফেলে দেয়।
এর আগে ১৪ই মার্চ জুয়েল তার স্ত্রী তাহমিনা বেগমের সঙ্গে রাতের খাবার শেষ করে চাপরতলা বউবাজারে চা খেতে যাচ্ছে বলে লুঙ্গি ও হাফ শার্ট পরে ঘর থেকে বের হয়ে যায় এবং দ্রুত বাসায় ফিরে আসবে বলে স্ত্রীকে আশ্বাস দেয়। ঘণ্টা খানিক পার হওয়ার পরও জুয়েল ফিরে না আসায় স্ত্রী তাহমিনা বেগম তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে জুয়েলের নম্বরে ফোন করে মোবাইলটি বন্ধ পান। তাহমিনা ও জুয়েলের মা রোহেনা বেগম বিষয়টি তার চাচাকে জানান। ওইরাত থেকে শুরু করে ১৭ই মার্চ পর্যন্ত চাপরতলা এবং আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঁেখাজ-খবর নিয়ে কোথাও জুয়েলের সন্ধান পাননি তারা। ১৯শে মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় চাপরতলা খন্দকার বাড়ি সংলগ্ন ডোবায় একটি লাশ ভেসে উঠেছে এই খবর পেয়ে জুয়েলের মা, স্ত্রী ও ভাইয়েরা সেখানে গিয়ে লাশের শরীরে থাকা লুঙ্গি এবং পরিহিত শার্ট দেখে লাশ জুয়েলের বলে শনাক্ত করেন।

No comments

Powered by Blogger.