উবার চালক কেন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করলেন?

ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে অ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোতে রাইডাররা নিবন্ধন করেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রাইডারদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে অফিস থেকে নেয়া ঠিকানা অনুযায়ী তাদের খোঁজে পাওয়া যায় না। তাই এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। নির্দেশ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তার কার্যালয়ে এসব কথা বলেন। ২৫শে এপ্রিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য (২১) কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হন। তিনি উবারের মটরসাইকেলের যাত্রী ছিলেন। ২৬শে এপ্রিল মোহাম্মদপুর থেকে লাবণ্যকে বহনকারী উবার চালক সুমন ও আশুলিয়া থেকে ২৭শে এপ্রিল কাভার্ড ভ্যান চালক আনিছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ।
তাদের গ্রেপ্তারের পরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনার দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী লাবণ্য রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবারের চালককে অ্যাপসের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানান। লাবণ্য’র কল পেয়ে তার থেকে পাঁচ মিনিটের দুরত্বে থাকা চালক সুমন তাকে ১০ টা ৩৬ মিনিটে ফোন দেন। লাবণ্য তখন খিলগাঁও ছায়াবীথি মসজিদের সামনে যাওয়ার কথা বলে চালক সুমনকে শ্যামলী তিন নম্বর রোডের ৩১ নম্বর বাসার সামনে আসতে বলেন। লাবণ্যর দেয়া ঠিকানা থেকে তাকে নিয়ে কলেজ গেট দিয়ে খিলগাঁওয়ের উদ্দেশ্য রওনা দেন সুমন। তারপর লাবণ্যকে বাইকে উঠিয়ে বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে থাকে সুমন। একপর্যায়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের কাছাকাছি আসলে পেছন থেকে বাইকটিকে ধাক্কা দেয় কাভার্ডভ্যান। এসময় বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যান লাবণ্য। আর সঙ্গে সঙ্গে ওই কাভার্ডভ্যানটি তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পরে পথচারি ও চালক সুমন লাবণ্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে লাবণ্যকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লব সরকার বলেন, উবার চালক সুমন হাসপাতালে যে ঠিকানা দিয়েছিলেন সে ঠিকানা ভুয়া। এমনকি তার যে ঠিকানা দিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে সেই ঠিকানায় তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া উবার অফিসে যে ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন সেটিও ভুয়া। তিনি বলেন, উবারের অফিসে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে রাইডাররা নিবন্ধন করে সড়কে রাইড শেয়ারিং করার অনুমতি পায়। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো কোন রকম যাচাই বাছাই ছাড়া চালকদের অনুমতি দিচ্ছে। এসব চালকদের মধ্যে অনেকেই দক্ষ চালক না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাদক সেবন করে। নারীদের বাইকে তুলে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অযথা ব্রেক ধরে। আরোহীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট দেয়া হয়। এগুলো মনিটরিং করার মত কেউ নাই। তাই এসব বিষয়ের দ্রুত সমাধান করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, চালক সুমন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করায় তাকে খুঁজে পেতে পুলিশের অনেক সময় লেগেছে। উবার কর্তৃপক্ষও প্রথম দিকে কোন সহযোগিতা করেনি। পরে প্রযুক্তির সহযোগীতায় ২৬শে এপ্রিল সুমনকে মোহাম্মদপুরের নবীনগর এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ঘটনার পর পরই পালিয়ে চলে যায় কাভার্ডভ্যান চালক আনিছুর রহমান। আমরা ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু ফুটেজ ছিল অস্পষ্ট।
কাভার্ডভ্যানটিকে শনাক্ত করা যাচ্ছিলো না। পরবর্তীতে আরেকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কাভার্ডভ্যানের গায়ে কোম্পানির নাম লেখা ছিল। সেই নাম দেখেই কাভার্ডভ্যান শনাক্ত করে আশুলিয়া থেকে চালককে গ্রেপ্তার করা হয়। বিপ্লব সরকার বলেন, আমরা রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। কোনও দুর্ঘটনায় এসব প্রতিষ্ঠানের কোন গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উবারের সিনিয়র ম্যানেজার মো. আলী আরমানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকরা তার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা জানতে চান কোনো ধরণের অনুমতি বা বৈধতা ছাড়াই কিভাবে উবার ব্যবসা করছে। এর জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার মতো উপযুক্ত ব্যক্তি তিনি নন।
এদিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহতের ঘটনায় তাকে বহনকারী উবার চালক সুমন হোসেন ও কাভার্ড ভ্যান চালক আনিছুর রহমানের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার উপ পরিদর্শক নুরুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ সুমনের দুই দিন ও আব্দুর রহমানের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবি শহিদুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করে বলেন, ওই ঘটনায় চালক সুমনও আহত হয়েছেন। তার হেলমেটও ভেঙ্গে গেছে। তিনি নিজেও মারা যেতে পারতেন। তাকে রিমান্ডে নেয়ার কোন যুক্তিকতা নাই।

No comments

Powered by Blogger.