ঘুষ দিয়ে ভোট কিনছেন মে!

বিরোধী দল লেবার নিয়ন্ত্রিত যেসব আসনের বাসিন্দা ব্যাপকভাবে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, সেই সব এলাকার জন্য ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন পাউন্ডের বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে । ব্রেক্সিট চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর লেবার দলীয় আইনপ্রণেতাদের সমর্থন আদায়ের কৌশল হিসেবে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা উঠেছে। গতকাল সোমবার এই অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা আসে।
লেবার দলের পক্ষ থেকে এটিকে ‘ঘুষ দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর একাধিক আইনপ্রণেতা সরকারের সঙ্গে এমন সমঝোতার কথা অস্বীকার করেছেন।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই লেবার আইনপ্রণেতাদের একটি অংশের সঙ্গে সরকারের দর-কষাকষির খবর শোনা যাচ্ছিল। এসব আইনপ্রণেতা উন্নয়ন বরাদ্দের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ওই সব দাবির অন্যতম হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদের পর কর্মজীবী মানুষের অধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা এবং ইইউ’র সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণে সংসদকে অধিকতর মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, ‘স্ট্রংগার টাউন ফান্ড’ এ বরাদ্দকৃত অর্থের বেশির ভাগই পাবে উত্তর ইংল্যান্ড এবং মিডল্যান্ডসের শহরগুলো, যেখানে প্রবৃদ্ধির সুবিধা সমানভাবে পৌঁছায়নি।
উত্তর ইংল্যান্ড এবং মিডল্যান্ডসের মধ্যে আছে উইকফিল্ড, ডনকাস্টার ও উইগানের মত এলাকা, যেখানে বাসিন্দারা অধিক মাত্রায় ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
উইগানের সাংসদ লিসা ন্যান্ডি প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট চুক্তিকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে আগামী ১২ মার্চ ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটির আগে সরকার যেভাবে বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে সেটির সমালোচনা করেছেন তিনি। লিসা বলেন, কনজারভেটিভ সরকার গত ৯ বছর ধরে বাজেট কর্তন করার কারণে তাঁর নির্বাচনী এলাকার মতো এলাকাগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার যে বরাদ্দ ঘোষণা করেছে তা ওই ক্ষতির তুলনায় খুবই সামান্য।
কমিউনিটিজ সেক্রেটারি জেমস ব্রোকেনশায়ার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, ব্রেক্সিট ভোটের বিনিময়ে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। চুক্তি পাস হোক বা না হোক-এই বরাদ্দ বলবৎ থাকবে।
ইইউ’র সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকরে প্রধানমন্ত্রী মে দীর্ঘ ১৮ মাসের চেষ্টার পর একটি চুক্তিতে পৌঁছান। গত ১৫ জানুয়ারি সংসদে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে দেন আইনপ্রণেতারা। আইনপ্রণেতাদের দাবি অনুযায়ী চুক্তিটি সংশোধনে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন মে। আগামী ১২ মার্চ চুক্তি অনুমোদন প্রশ্নে আবার ভোটাভুটি হওয়ার কথা।
গতকাল মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল জিওফরি কক্স চুক্তি সংশোধনে ইইউ’র সঙ্গে চূড়ান্ত পর্বের আলোচনার জন্য গেছেন। তবে চুক্তি সংশোধনে নারাজ ইইউ। তাই কাঙ্ক্ষিত সংশোধন নাও হতে পারে বলে ধারণা।
১৫ জানুয়ারি ভোটাভুটিতে ২৩০ ভোটের ব্যবধানে প্রত্যাখ্যাত হয় মে’র চুক্তি। চুক্তির পক্ষে ছিল ২০২ ভোট। গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এবার চুক্তিটি পাস করিয়ে নিতে হলে চুক্তির পক্ষে অতিরিক্ত ১১০ ভোট টানতে হবে। কনজারভেটিভ দলের বিদ্রোহী ১০৫ ভোট, সরকারের অংশীদার ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) ১০ ভোট এবং লেবার দলের ৪০ জন আইনপ্রণেতা রয়েছেন, যাদের আসনে ব্রেক্সিটের পক্ষে অতিমাত্রায় ভোট পড়েছিল-এদের মধ্য থেকেই প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন মে।
অবশ্য অর্থের বিনিময়ে সমর্থন আদায়ের বিষয়টি থেরেসা মে’র জন্য নতুন নয়। ২০১৭ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর নর্দান আয়ারল্যান্ডের জন্য এক বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেওয়ার বিনিময়ে ডিইউপি’র সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেন থেরেসা মে।

No comments

Powered by Blogger.