নির্বাচন করছেন না আলোচিত রাজনীতিক মায়াবতী

লোকসভা নির্বাচনে নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না ভারতের সুপরিচিত রাজনীতিক, দলিত শ্রেণির আইকনে পরিণত হওয়া ও উত্তর প্রদেশে চারবারের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। তার এমন ঘোষণায় হতাশ হয়েছে দেশ। তবে মায়াবতী বলেছেন, ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রভাবকে মোকাবিলার জন্য যে জোট গঠন করেছেন তিনি সেদিকে বেশি নজর দেবেন। অর্থাৎ তিনি নিজে নির্বাচনে না গিয়ে জোটকে দিয়ে রাজনীতির খেলা খেলতে চাইছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
ভারতে লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে ১১ই এপ্রিল। এর ফল পাওয়া যাবে ২৩ শে মে। এ নির্বাচনে কোনো একক দল যদি পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তবে কিংমেকার বা কে ক্ষমতায় যাবে তা নির্ধারণে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) মতো আঞ্চলিক দলগুলো বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মায়াবতী বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা নির্বাচনে তিনি নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। তবে তিনি এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন, যখনই আমি চাইবো তখনই লোকসভা নির্বাচন করলে জিতে যাবো। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেই জিতে যাবেন। মায়াবর্ত বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মনে ধারণ করে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো না। যেকোনো মূল্যে আমার জোটকে আমি দুর্ভোগে ফেলবো না। আমার বিজয়ের চেয়ে নির্বাচনে অধিক পরিমাণে আসন জেতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনের আগে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সঙ্গে জোট গঠন করেছে মায়াবতীর বিএসপি। বলা হচ্ছে, রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে এটিই হলো জাতীয় পর্যায়ে বড় জোট। মায়াবতীর জীবনীকার সাংবাদিক অজয় বোস। তিনি মায়াবতীর এমন সিদ্ধান্তকে উদ্ভট বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তার এমন সিদ্ধান্ত এটা পরিষ্কার করেছে যে তিনি নিজের স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থকে বড় করে দেখেন।
অজয় বোস বলেন, এর মধ্য দিয়ে মায়াবতী তার ভাবমূর্তিকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে এমন একজন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন, যেখানে তিনি থাকছেন সব বচসার ঊর্ধ্বে। তিনি এমন কেউ যিনি অধিকতর বড় লড়াইয়ের সমর্থক।
মায়াবতীর রাজনীতির যাত্রা অস্বাভাবিক। তিনি পড়াশোনা করেছেন আইনে। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার আগে শিক্ষকতা করেছেন। তার প্রদর্শক ছিলেন দলি ত শ্রেণির নেতা ও রাজনীতিক কাশি রাম। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন বিএসপি। দ্রুততার সঙ্গে খ্যাতির শীর্ষে চলে যান মায়াবতী। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ১৯৯৫ সালে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন। এ পদে তিনিই ছিলেন ভারতে সবচেয়ে কম বয়সী রাজনীতিক।
কিন্তু তার রাজনীতি, ক্ষমতা গ্রহণ, ক্ষমতায় থাকা কোনো কিছুই কেলেঙ্কারির বাইরে থাকে নি। বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তার সম্পদের পরিমাণ কয়েক মিলিয়ন ডলার। আর বাইরে আছে তার নামে বেশ কিছু সম্পত্তি। তার জন্মদিনের ইভেন্টতো মিডিয়ায় বড় স্থান জুড়ে থাকে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ফাঁস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তারবার্তায় দেখা যায়, তিনি মুম্বই থেকে একজোড়া স্যান্ডেল কিনতে ফাঁকা একটি বেসরকারি জেট ভাড়া করে পাঠিয়েছিলেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন মায়াবতী।
তিনি সরকারি অর্থের যথেষ্ট অপব্যবহার করেন বলে অভিযোগ আছে। বলা হয়, তার রাজ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় অপরাধ। তা ছাড়া এই রাজ্যটি ভারতের সবচেয়ে গরিব রাজ্যের অন্যতম। এখানে আছে নিম্ন মানের উন্নয়ন সূচক। তারই প্রায় এক ডজন মূর্তি আছে রাজ্যে। আছে তার দলের প্রতীক ৭৫টিরও বেশি পাথরের হাতি। তিনি ক্ষমতায় থাকার সময়ে এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল উত্তর প্রদেশে। তিনি ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এসপি দলের কাছে হেরে যান।
এখনও তার বিপুল ভক্ত। বিশেষ করে ভারতের লাখ লাখ গরিব ও নিষ্পেষিত দলিত শ্রেণির কাছে তিনি ‘বেহেনজি’ বা বোন হিসেবে সমাদৃত। এই সম্প্রদায়ের কাছ থেকেই তিনি সবচেয়ে বেশি সমর্থন পান। তিনি ২০১২ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনী বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু উত্তর প্রদেশের শাহরানপুরে জাতিগত সহিংসতার মধ্যে ২০১৭ সালে ওই পদ ত্যাগ করেন।

No comments

Powered by Blogger.