নীরব মোদি লন্ডনে সরব

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ভারতের পুলিশ। কোন দেশে পালিয়ে আছেন, তা নিয়ে আছে অনেক জল্পনা। অবশেষে খোঁজ মিলল তাঁর। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদকের চোখে পড়ে গেছেন নীরব মোদি। লন্ডনের পশ্চিম প্রান্তের এক রাস্তায় মোদিকে হেঁটে যেতে দেখেন তিনি। নীরব মোদির সঙ্গে ওই প্রতিবেদকের দুই মিনিটের একটি কথোপকথনের ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করে দৈনিকটি। প্রতিবেদকের সব প্রশ্নেই মোদির এক উত্তর, ‘নো কমেন্টস’।
গোলাপি শার্ট ও দামি কোট পরা মোদিকে হঠাৎ করে চেনা বেশ কঠিন ছিল। গোঁফও রেখেছেন তিনি। প্রতিবেদক তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘কত দিন লন্ডনে থাকার পরিকল্পনা তাঁর?’, ‘এখন তাঁর অর্থের পরিমাণ কত?’, ‘লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন কি না?’। কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দেননি মোদি। একটি ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে ওই জায়গা থেকে নীরবে সরে যান তিনি। তবে মন্তব্য না করলেও তিনি যে ভালো আছেন, তা বেশ বোঝা গিয়েছিল। তাঁর গায়ে ছিল উটপাখির চামড়ার জ্যাকেট, যার দাম ১০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি।
পরে নীরব মোদির অবস্থান নিয়ে অনুসন্ধান চালায় টেলিগ্রাফ। জানা গেছে, লন্ডনের পশ্চিম প্রান্তে অভিজাত এলাকা সোহোতে আবার হীরার ব্যবসা শুরু করেছেন মোদি।
গত বছরের শুরুতে ২৮০ কোটি রুপি জালিয়াতিতে একজন হীরা ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম সন্দেহে আসে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের (পিএনবি)। নীরব মোদি নামের ওই হীরা ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের হীরার গয়নার দারুণ সুনাম রয়েছে বিশ্বজুড়েই। শুধু বলিউডের তারকারাই নন, হলিউড, এমনকি অনেক দেশের রাজপরিবারের সদস্যরাও পরছেন এই গয়না। এমন এক ব্যক্তির এ রকম জালিয়াতি কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। ১৩ হাজার কোটি রুপি আত্মসাৎ করে উড়াল দেয় পাখি। তাঁকে এ কাজে সহযোগিতা করেন আত্মীয় মেহুল চোকসি।
মেহুল চোকসি এখন অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডার নাগরিকত্ব নিয়েছেন। ভারতে ফিরে না যাওয়ার বিষয়ে শারীরিক অসুস্থতা ও জীবননাশের হুমকি আছে—এমনটা দেখিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, নীরব মোদির আইনজীবীর দাবি, নীরবও জীবননাশের হুমকিতে আছেন। গত ডিসেম্বরে মোদির পক্ষে ভারতের মুম্বাই আদালতে তাঁর আইনজীবী বলেন, তাঁকে শয়তান হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং ব্যাংক জালিয়াতির ‘পোস্টার বয়’ বানানো হয়েছে।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদক খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, নিজের এমন কৃতকর্মের পরেও বেশ উদাসীন একটা মনোভাব নিয়ে চলেন মোদি। সোহোতে তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট আছে। প্রায় একটি কুকুর নিয়ে ভ্রমণে বের হন। তাঁর ওই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য প্রায় ৮০ লাখ পাউন্ড বা ৭৫ কোটি রুপি।
যুক্তরাজ্যের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ জানায়, নীরব মোদি এখানকার সরকারি বিমার আওতায় আছেন। তবে কেন তাঁকে এই সরকারি বিমা নম্বর প্রদান করা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে আইনগতভাবে ব্যবসা করতে চাইছেন। এমনকি ভারত যখন তাঁকে খুঁজছে, তখনো তিনি অনলাইনে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
অন্যদিকে, ভারতের শীর্ষস্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তা এনডিটিভি অনলাইনকে জানিয়েছে, তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। কেউ যদি জালিয়াতি করে, তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করতে ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি লন্ডনে শরণার্থীর মতো আছেন।’
গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার বলেছেন, ‘নীরব মোদি যে লন্ডনে, তা ভারত সরকার জানে। এ জন্য আমরা যুক্তরাজ্যের কাছে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। তাঁকে রাস্তায় দেখা গেছে—এর মানে এই নয় সবকিছু এখন দ্রুত হয়ে যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.