কলকাতায় গরুর দুধের চেয়ে মূত্রের দাম বেশি!

গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যকে অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় গত তিন-চার বছরে তুঙ্গে উঠেছে গোমূত্রের বিক্রি। বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে গোমূত্র চিকিৎসা ক্লিনিক। বিক্রি হচ্ছে গোমূত্র ক্যাপসুল এবং ডিস্টিল্ড ও মেডিকেটেড গোমূত্র। ক্রেতাদের এতই চাহিদা যে, ব্যবসায়ীরা দুধের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি দামে গোমূত্র বিক্রি করছেন।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র গোমূত্রের রোগ প্রতিরোধক গুণের দাবিকে বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি না দিলেও গোমূত্র বিক্রি প্রতি বছর ২০-২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ফার্মাকোলজির শিক্ষক স্বপন জানার বলেন, এর পুরোটাই ভ-ামি। গাছগাছালি থেকে রাসায়নিক বের করে ওষুধ হতে পারে। তার ফার্মাকো কাইনেটিক্স ও ডায়নামিক্স রয়েছে।
গোমূত্রের এমন কিছুই নেই। অথচ কলকাতা শহরে এর চাহিদা দেখে অন্য রাজ্যের নামী গোশালা থেকে গোমূত্র আনিয়ে ব্যবসা করছেন একাধিক এজেন্ট। গোমূত্র ব্যবসায়ী ললিত আগরওয়াল বলেন, গত কয়েক বছরে এখানে গোমূত্রের চাহিদা পাঁচ গুণ বেড়েছে। মাসে প্রায় ১০ হাজার লিটার গোমূত্র বিক্রি হয় পশ্চিমবঙ্গে। এ রাজ্যে তেমন উৎপাদন নেই। তাই আমরা নাগপুর থেকে আনিয়ে দিই। ললিত জানান,এক লিটার গোমূত্রের দাম ৩৫০ টাকা। আর ওখান থেকে আনা দুধ আমরা বিক্রি করি ১৫০ টাকা লিটারে। সাধারণত কলকাতায় গরুর দুধ লিটার প্রতি ৩৫-৪৮ টাকার মধ্যে মেলে। তার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গোমূত্র। নাগপুরের যে ‘গো-বিজ্ঞান অনুসন্ধান কেন্দ্র’  থেকে ব্যবসায়ীরা কলকাতায় গোমূত্র ও দুধ নিয়ে আসেন, সেটি মূলত আরএসএস-পোষিত সংস্থা। গোটা ভারতে তাদের ৫০০শ’রও বেশি গো-শালা রয়েছে। সেখানকার চিফ কো-অর্ডিনেটর সুনীল মানসিংহ বলেন,পশ্চিমবঙ্গেও আমরা ১৬টি জায়গায় গো-শালা শুরু করেছি। সেখান থেকেও কিছুদিনের মধ্যে ডিস্টিল্ড গোমূত্র মিলবে। ক্যালকাটা পিঁজরাপোল সোসাইটি নামে একটি সংস্থার পাঁচটি গো-শালা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেখানকার কো-অর্ডিনেটর সর্বেশ্বর শর্মা বলেন, প্রতি বছর ২০-২৫ শতাংশ হারে গোমূত্রের বিক্রি বাড়ছে। কলকাতায় মাসে প্রায় ৩ হাজার লিটার গোমূত্র বিক্রি হয় আমাদের। ১ লিটার গোমূত্রের দাম পড়ে ১৭৫ টাকা। সেখানে আমরা ১ লিটার দুধ বিক্রি করি ৫০ টাকায়।  মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে গো-মূত্র থেরাপি ক্লিনিক চালাচ্ছেন ব্যবসায়ী বীরেন্দ্র জৈন। তিনি বলেন, কলকাতাতেও আমাদের অনেক রোগী আছে। অনেক নেতারা ওষুধ নিয়ে যান। মেডিকেটেড গো-মূত্র ২১০ টাকা করে লিটার বিক্রি করি। মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার লিটার বিক্রি হয়। সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের ব্যাখ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভিন্ন সংস্কৃতি গ্রহণে একটু বেশি এগিয়ে। এ রাজ্যে এখন গণেশ পুজো, ধনতেরস, বিয়েতে মেহন্দির ধুম। তেমন ভাবেই চলে এসেছে গো-মূত্র। ক্রমবর্ধমান মাল্টিরেসিয়াল সোসাইটি বা হিন্দিবলয়ের মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির প্রভাবও এর পিছনে রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.