৩৮০ কোটি গরিবের সমান সম্পদ ২৬ ধনীর হাতে

গত এক বছরে বিশ্বে ধনীরা আরো ধনী হয়েছেন। গরিবরা আরো গরিব। ২০টি নিরপেক্ষ দাতব্য সংস্থার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বৃটিশ সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল তাদের এক নতুন রিপোর্টে এসব কথা বলেছে। এতে আরো বলা হয়েছে, নিচের দিকে থাকা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই পশ্চাৎমুখী হয়েছে। অর্থাৎ তাদের অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ খবর প্রকাশ করেছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এতে আরো বলা হয়েছে, বিশ্বে সম্পদের অসমতার ওপর আলোকপাত করতে প্রতি বছরের মতো এবারও রিপোর্ট করেছে অক্সফাম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠক বসার কথা দাভোসে। সেখানে মিলিত হচ্ছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণির মানুষ।
ঠিক তেমন এক সময়েই এমন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অক্সফাম। এতে তারা ব্যবহার করেছে অর্থনীতি বিষয়ক বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের ডাটা। এই ম্যাগাজিনটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের সম্পদের হিসাব রাখে। সেখান থেকে ডাটা নিয়ে অক্সফাম দেখেছে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের মার্চ সময়ের মধ্যে বিশ্বের ২০০০ ডলার বিলিয়নিয়ারের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ১২ ভাগ।
পক্ষান্তরে সুইস ব্যাংক ক্রেটি সুইজি’র বিশ্লেষণ বলে যে, ২০১৭ সালের মধ্যভাগ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার নিচের অর্ধেকের সম্পদে কমেছে শতকরা প্রায় ১১ ভাগ। এমন মানুষের সংখ্যা ৩৮০ কোটির মতো। এ বিষয়ে অক্সফামের প্রচারণা বিষয়ক পরিচালক ম্যাথিউ স্পেন্সার বলেছেন, আমাদের অর্থনীতি এভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের সম্পদ বাড়ছেই। যেখানে কোটি কোটি মানুষ শুধু জীবনধারণ করে আছেন। তাই অক্সফাম সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্পদের ওপর আয়কর বাড়াতে এবং তা থেকে যে রাজস্ব আসবে তা দিয়ে উন্নততর স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে।
ম্যাথিউ স্পেন্সার বলেন, উপযুক্ত মাতৃত্ববিষয়ক সেবার অভাবে নারীরা মারা যাচ্ছেন। শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা থেকে উত্তরণ হতে পারে তাদের দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ। কেউ গরিব হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে বলেই তিনি অল্প বয়সে মারা যাবেন বা অশিক্ষিত হয়ে থাকবেন এমনটা হতে পারে না।
ওদিকে অনেক বিশ্লেষক বলেন যে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বে দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষ, যাদের দিনে আয় ২ ডলারের কম, তাদের সংখ্যা দ্রুত কমে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের একটি ডাটা অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে এমন মানুষের হার ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ। তা কমে ২০১৫ সালে এসে দাঁড়ায় শতকরা ৯.৬ ভাগ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এমনটা হয়েছে বিশাল দেশ যেমন চীন ও ভারতের মতো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে। কারণ, তারা তাদেরকে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বিশ্বে আয় অসমতা নিয়ে আগে গবেষণা করতেন ব্রাঙ্কো মিলানোভিচ। তিনি হিসাব কষে দেখেছেন যে, শিল্প বিপ্লব শুরুর পর প্রথমবারের জন্য আন্তর্জাতিক আয় অসমতা কমেছে ১৯৮৮ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে।
অক্সফাম যে হিসাবের ওপর ভিত্তি করে বলেছে, বিশ্বের নিচের দিকে থাকা অর্ধেক মানুষের সম্পদ কমেছে সে বিষয়ে ক্রেডিট সুইজির বিশ্লেষণ সামান্য ভিন্ন কথা বলছে। এতে দেখা গেছে ২০১৮ সালে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ সামান্য কমেছে। অর্থাৎ শতকরা ৪৭.৫ ভাগ থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪২.২ ভাগে। 
সোমবার অক্সফাম তার রিপোর্টে বলেছে, বিশ্বের ২৬ জন ধনী ব্যক্তির সম্পদ বিশ্বের মোট মোট মানুষের নিচের দিকে থাকা অর্ধেকের সম্পদের সমান। ২০১৭ সালে এমন ধনীর সংখ্যা ছিল ৪৩ জন।

No comments

Powered by Blogger.