৩ ঘণ্টার মাথায় সিদ্ধান্ত পাল্টালেন এরশাদ

বিকাল পাঁচটায় সংবাদ সম্মেলন করে দুটি সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দলীয় সিদ্ধান্তে যেসব আসনে উন্মুক্ত প্রার্থী ছিলেন তাদেরও নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়ে ছিলেন। তার এ সিদ্ধান্ত জানানোর প্রায় তিন ঘণ্টার মাথায় রাত আটটায় পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ভিন্ন তথ্য। এরশাদের স্বাক্ষর করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে না। সবাইকে নির্বাচনের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হলো।
এতে দাবি করা হয়, তার বক্তব্য ভুলভাবে গণমাধ্যমে এসেছে। এজন্য তিনি মর্মাহত। বুধবার সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে গতকাল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে পার্টির নেতাকর্মীদের বার্তা দেন এরশাদ। তিনি বলেন, জাপার দলীয় ১৪৬ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে তাদের পক্ষে একত্রে কাজ করার অনুরোধ করছি।
আরেকবার তিনি বলেন, যেসব আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা আছে সেখানে তারা লড়াই করবেন। তিনি বলেন, মহাজোটের সমর্থনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে  নেবেন। তবে যেখানে জয়ের সম্ভাবনা আছে তারা প্রত্যাহার করবেন না। এ ছাড়া মহাজোট থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হবে তাই মেনে নিতে হবে।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢাকা-১৭ আসনে নৌকার প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুক দেখা করতে এলে, এরশাদ নৌকার প্রার্থীর মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আসনটি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি তোমাকে আসনটি দিলাম। তুমি এগিয়ে যাও। আমার দোয়া রইলো তোমার সঙ্গে। এরপর বিকাল ৫টায় সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সরে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথা জানান এরশাদ। বলেন, এ আসনটিতে আমি নির্বাচন করতাম, নানাবিধ কারণে আমি বিরত থেকে ফারুককে সমর্থন করলাম। সংবাদ সম্মেলনে দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, যে দলকে পছন্দ হয় সে দলকে ভোট  দেবেন।
এরশাদ আরো বলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনে মহাজোটকে সমর্থন করবো। আমি নির্বাচনে বোন শেখ হাসিনাকে সর্বত্র সহযোগিতা করবো। তাকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। তিনি বলেন, সন্তুষ্টির মধ্য থেকে নির্বাচন শেষ হবে।
এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সহিংসতা সম্পর্কে এরশাদ বলেন, এটা বাংলাদেশের রীতি। প্রত্যেক নির্বাচনে সহিংসতা হয়।
মানুষ হত্যা করা হয়। এবছর কত জন মারা গেছে। এটা বরাবরের জন্য হয়ে আসছে। তিনি বলেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমি রংপুর যেতে পারি নি। তবে ভালো হয়ে যাবো। আশা করি রংপুরের মানুষ সদয় হয়ে রংপুর-৩ আসন আমাকে উপহার দেবে। নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, বিএনপির অবস্থা ভালো না। তাদের অতীত রেকর্ড ভালো না। জয়ের সম্ভাবনা নেই বিএনপির। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না। একইভাবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নীরব থাকেন এরশাদ। বলেন, এটা আপনারাই দেখছেন। ভালো বলতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমি তাকে অন্যভাবে চিনি। তিনি একজন কবি মানুষ, আইডিওলজিস্টিক। তবে কমিশনের কথা নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার নাই। নির্বাচন কমিশন জনগণের পক্ষে আছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে এরশাদের বাসভবনে ঢাকা-১৭ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফারুক উপস্থিত হয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। এসময় ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, আমার বড় ভাই এরশাদ এই আসন ছেড়ে দিয়ে মানবতার নজির স্থাপন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, এরশাদের মধ্যে বিন্দু পরিমাণ ক্ষোভ নেই। কেউ যদি এ কথা বলে আমি বিশ্বাস করি না।
রাতে এরশাদের বিবৃতি
রাতে জাপা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। মহাজোট ব্যতীত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মুক্তভাবে নিজ নিজ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তাদেরকে নির্বাচনের মাঠে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

No comments

Powered by Blogger.