সংসদ নির্বাচন: বাংলাদেশের লিটমাস টেস্ট

রোববার বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের ভোটকে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির গণতন্ত্রের জন্য লিটমাস টেস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করছেন অনেকে। টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার শাসনকালে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠা হিসেবে অভিযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, দু’বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয়েছে। কারণ, তিনি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে কারাভোগ করছেন । তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এসব কথা লিখেছে অনলাইন আল জাজিরা।
নতুন গড়ে উঠা একটি বিরোধী দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে মিলে নির্বাচন করছে বিএনপি। ওই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ধর্মনিরপেক্ষ আইকন ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। সুষ্ঠু নয়, এমন অভিযোগে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। আর ওই নির্বাচনকে একটি জালিয়াতির নির্বাচন আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থাকেন। অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এতে তারা একটি ওয়াকওভার পায়। এবার নিজেদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে এসেছে বিএনপি। তবে এর নেতারা অভিযোগ করছেন, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করতে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করছে সরকার।
বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা একটি সাধারণ বিষয়। এখন পর্যন্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় কমপক্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
একনজরে ১৯৭১ থেকে বর্তমানের বাংলাদেশ:
১৯৭১: নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আওয়ামী লীগের ওই বিজয়কে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায় পশ্চিম পাকিস্তান। এর ফলে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯৭২: পাকিস্তানের আটক অবস্থা থেকে দেশে ফেরেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৭৫: সামরিক অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হন শেখ মুজিবুর রহমান। জারি করা হয় সামরিক শাসন।
১৯৭৯: সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয়। বিজয়ী হন জিয়াউর রহমান।
১৯৮১: জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় সামরিক অভ্যুত্থানে।
১৯৮২: সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। স্থগিত করেন সংবিধান।
১৯৮৬: জাতীয় নির্বাচনে ৫ বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন এরশাদ।
১৯৮৭: বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের পরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
১৯৯০: পদত্যাগ করেন এইচএম এরশাদ। দুর্নীতির অভিযোগে পরে জেলে যান। 
১৯৯১: খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। প্রেসিডেন্টের পদমর্যাদার বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করা হয়।
১৯৯৬: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
২০০১: খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হন শেখ হাসিনা।
২০০৪: নারীদের জন্য ৪৫টি আসন সংরক্ষিত রেখে সংবিধান সংশোধন করে পার্লামেন্ট। গ্রেনেড হামলায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এতে নিহত হন কমপক্ষে ২২ জন।
২০০৭: সহিংসতার পর জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট।
২০০৮: ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে আড়াই শতাধিক আসনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।
২০০৯: জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা নেন শেখ হাসিনা।
২০১২: জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ গঠন হয়। তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল বলে অভিযোগ।
২০১৩: নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট।
২০১৪: জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফেরেন শেখ হাসিনা।
২০১৭: আগস্টে মিয়ানমার থেকে ঢলের পানির মতো আসতে থাকে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘ বলে, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।
২০১৮: খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের জেল দেয়া হয়। নির্বাচনে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.