সংলাপের দিকে চোখ বাংলাদেশের by কাজী সোহাগ

সমঝোতার আশা নিয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে বসছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রথম দফা সংলাপে ‘উল্লেখযোগ্য সমাধান’ না মিললেও আজকের আলোচনা থেকে ইতিবাচক অগ্রগতির প্রত্যাশা নিয়ে নেতারা গণভবনে যাচ্ছেন। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ  সংবিধানের মধ্যে থেকে আলোচনার অবস্থানে থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে নমনীয় হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। গতকাল মন্ত্রিসভার চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও নির্বাচনকালে বর্তমান মন্ত্রিসভা বহাল রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। চার মন্ত্রীকে সরানো সম্ভাব্য কোনো সমাধানের পথ হতে পারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আজকের সংলাপ সামনে রেখে পুরো দেশের দৃষ্টি গণভবনে। কী হবে সংলাপে? সমাধান কি আসবে? এই প্রশ্ন এখন রাজনীতির মাঠে।
গতকাল ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সংলাপ সফল না হলে আন্দোলন চলবে। আজকের সংলাপ থেকে প্রত্যাশিত ফল না এলে আগামীকালই রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চ এবং তফসিল ঘোষণা না পেছালে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সমাবেশ থেকে।
আজ দুপুরে গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ শুরু হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট্রের নেতৃত্বে থাকবেন ড. কামাল হোসেন। সকাল ১১টায় সংলাপ শুরু হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ যেন থাকে সে লক্ষ্যে তারা সংলাপ করছেন। এক্ষেত্রে সংবিধানের মধ্যে থেকে যতটুকু ছাড় দেয়া সম্ভব ততটুকু ছাড় দেয়া হবে। এর বাইরে কোনো কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করছেন এমন এক নেতা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, আমরা খোলা মনে ঐক্যজোটের সঙ্গে বসতে রাজি হয়েছি। তারা চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সময় দিয়েছেন। এতে প্রমাণ হয়, আমরা সংলাপ সফল করতে কতটা আন্তরিক।
তিনি জানান, এখন ঐক্যফ্রন্ট যদি নির্বাচন নিয়ে অন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। আজকের সংলাপে ঐক্যজোট আবারও ৭ দফা দাবি নিয়ে অনড় থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানান। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যজোটের তিন নম্বর পয়েন্ট হলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাদেরকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। নিশ্চয়তা দিয়েছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের।
নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। শুধু যে সব বিষয়ে ইসি সহযোগিতা চাইবে, সেসব বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের ছয় নম্বর দফা হলো বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবেন এবং নির্বাচন মনিটরিং করবেন। এই ব্যাপারেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমাদের সাপোর্ট থাকবে। আর ইভিএম’র ব্যাপারে তিনি বলেছেন,  ইভিএম একটি আধুনিক পদ্ধতি। তবে, এবার হয়তো নির্বাচন কমিশন সীমিতভাবে ব্যবহার করবে। এতে আমাদের সমর্থন থাকবে। তিনি আরও বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে মামলা। তারা রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে একটা প্রশ্ন তুলেছেন।
এই ব্যাপারে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাদের যে মামলাগুলো রাজনৈতিক মামলা, সে তালিকা আমার কাছে পৌঁছে দিতে। এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে হয়তো তারা রাজনৈতিক মামলার তালিকা দিতে পারে। ওই তালিকা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে আজকের সংলাপে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি অন্যতম বড় ইস্যু হতে পারে বলে জানান আওয়ামী লীগের নেতারা। এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। রোববার সচিবালয়ে তিনি জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করতেই পারে। সেটা যদি তারা চায় আলোচনার দরজা তো খোলা আছে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হতে পারে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকতে পারে। লোকাল প্রশাসন পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের সহযোগিতা নিতে পারে।
সংলাপে আওয়ামী লীগ কতটা ছাড় দিতে পারে সে প্রসঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক জানান, ঐক্যজোটের যে সাত দফা দাবি, তার ছোটখাট কিছু বিষয়ে হয়তো ছাড় দেয়া হতে পারে। কিন্তু সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের যে দাবি, সেটা মানার কোনো সুযোগ নেই। কেয়ারটেকার সরকার তো সংবিধানে নেই। কোনোক্রমেই এখানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। একই প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আশা করি সব বাস্তবতা বুঝে আগামী নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে।
আজকের সংলাপে আওয়ামী লীগের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান সম্মতভাবে একটি সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যা যা করা প্রয়োজন এবং সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সদিচ্ছা থাকবে। ঐক্যজোটের দাবি মানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের দাবি যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে সেটা মানা সম্ভব হবে না সে বাস্তবতা তাদের বুঝতে হবে। ছাড় দেয়ার কোনো প্রস্তুতি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, তারা সংলাপে আসুক। কী ধরনের কংক্রিট প্রস্তাব দেবে তা আগে দেখা হবে। তারপর আলাপ-আলোচনা আর পর্যবেক্ষণ করে তারপর মন্তব্য করা যাবে। কিন্তু এসবের জন্য তো সময় খুব কম- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সময় কম ঠিক আছে। তাই বলে তো আর সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করা যাবে না। তাই বলছি, সংবিধানের মধ্যেই যদি ছাড় দেয়ার সুযোগ থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ সেই ছাড় দেবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ ফলপ্রসূ করতে গেলে দুই পক্ষের সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১লা নভেম্বর তাদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টির সংলাপে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেয়। সেই আলোচনাও শেষ হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে বামপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে থাকতে পারেন- ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, এস,এম আকরাম, আবদুল মালেক রতন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

No comments

Powered by Blogger.