পথে পথে বাধা, ধরপাকড়

পথে পথে বাধা আর তল্লাশির মধ্যে পড়তে হয়েছে রাজধানীর বাইরে থেকে আসা  বিএনপি নেতা-কর্মীদের। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন নেতা-কর্মীরা। গ্রেপ্তারও করা হয় অনেককে। এতে করে সাধারণ যাত্রীদেরও পোহাতে হয়েছে চরম ভোগান্তি।
রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে তল্লাশি, আটক ১২
মানবজমিন স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে ঘিরে ঢাকায় প্রবেশদ্বার সাভারের বিভিন্ন পয়েন্টে  চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে ঢাকা জেলা পুলিশ। এসময় নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসসহ ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। সকাল থেকেই সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, নবীনগর, বাইপাইল ও আশুলিয়া বাজার এলাকায় পুলিশ অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাতে থাকে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ যাত্রীবাহী বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে গাড়িগুলো ঘুরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। এসব ঘটনায় পুলিশি নজরদারি এবং ঝামেলা এড়াতে মহাসড়কে অন্যান্য দিনের তুলনায় যানবাহন চলাচল ছিল তুলনামূলক ভাবে কম।
অন্যদিকে নিরাপত্তার কারণে মহাসড়কে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন গণপরিবহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ায় প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অনেককে পায়ে হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে সে ক্ষেত্রেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসময় রাজধানীতে প্রবেশকারী সাধারণ মানুষের দেহ তল্লাশিসহ সঙ্গে থাকা ব্যাগেও তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারলে আটকে দেয়া হয় অনেককে। এ ছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল ত্রিমোড়ে একটি মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন ১২ আরোহীকে আটক করেছে পুলিশ। আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিজাউল হক জানান, বাইপাইল ত্রিমোড় এলাকায় অস্থায়ী চেকপোস্টে একটি মাইক্রোবাসে সন্দেহাতীত ভাবে তল্লাশি চালানো হয়। এসময় মাইক্রোবাসটি থেকে লাঠিসোটাসহ ১২ আরোহীকে সন্দেহজনক ভাবে আটক করা হয়েছে।
টঙ্গীতে ট্রেন-বাস থামিয়ে যাত্রী হয়রানি
মানবজমিন স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী থেকে জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ ঠেকাতে টঙ্গীতে ঢাকামুখো বাস-ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা। টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ট্রেনের প্রত্যেক যাত্রীকে তল্লাশি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন আধা ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিনা কারণে টঙ্গী জংশনে আটকে রাখা হচ্ছে।
টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী গাজীপুর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তিনি জেলা প্রশাসনের রুটিনমাফিক নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অংশ হিসেবে টঙ্গী স্টেশনে সকাল ৭টা থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও বিনা টিকিটের যাত্রীদের জরিমানা করছেন। ভৈরব থেকে আসা সুরমা ট্রেনের কয়েকজন যাত্রীকে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনা টিকিটে ভ্রমণ করায় আমি তাদের আটক করেছি। আটককৃতরা ছাত্র হওয়ায় তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
স্টেশন মাস্টার আবদুল হালিম জানান, সুরমা ট্রেনটি সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে টঙ্গী  স্টেশনে প্রবেশ করে। দুপুর ১২টায় স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় সুরমা ট্রেন প্ল্যাটফরমে অবস্থান করছিল। দীর্ঘক্ষণ ট্রেনটিকে স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে স্টেশন মাস্টার আব্দুল হালিম বলেন, আমার কিছু করার নেই। উপরের নির্দেশে ট্রেন থামিয়ে রেখেছি। কন্ট্রোল রুমের নির্দেশ ছাড়া ট্রেন ছাড়ার ক্ষমতা আমার নেই। যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সকাল থেকেই প্রত্যেকটি ট্রেনের যাত্রীদের এভাবে হয়রানি করা হয়। সকাল থেকে টিকিট বিক্রিও বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের লোকজন ট্রেন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ ট্রেন থামিয়ে রাখায় অনেকে বিকল্প পথে গন্তব্যে যান।
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকার জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলা  জেনারেল হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করার কথা ছিল। সেই উদ্দেশে বাড়ি থেকে সকাল ৮টায় বের হয়ে গাড়িতে উঠেন। গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত আসেন ঠিকমতো। চৌরাস্তা পার হওয়ার পর গাড়ির গতি কমে যায়। টঙ্গীবাজার এসে দেখেন পুলিশ রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে তখন বেলা ২টা। এতে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। একটার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছার কথা ছিল। গাড়ি বন্ধ থাকায় ১টার মধ্যে পৌঁছাতে না পেরে দিশাহারা হয়ে ঘুরছেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, এ অবস্থা হবে জানলে একদিন আগে হাসপাতালে গিয়ে থাকতাম। তার মতো অসংখ্য রোগী ও সাধারণ যাত্রী ভোগান্তির শিকার হন।
এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও যাত্রীবাহী বাস চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে পুলিশ। গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে আব্দুল্লাপুর ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের নামিয়ে তল্লাশির নামে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করা হয়েছে। সন্দেহজনক যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। বোর্ড বাজার এলাকায় ৩৫ জন যাত্রীসহ একটি বাস আটক করে স্থানীয় গাছা থানায় হস্তান্তর করেছে ডিবি পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াও রয়েছেন। এর আগে গত শনিবার রাতে উত্তরা থেকে গাজীপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বশির উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ।
মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে টঙ্গী পূর্ব থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন)  সুব্রত কুমার পোদ্দার জানান উপরের নির্দেশ ছিল।
রূপগঞ্জে সমাবেশে যেতে পথে পথে বাধা, আটক ২
মানবজমিন স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ থেকে জানান, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় যোগ দিতে যাওয়া রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পথে পথে বাধা দিয়েছে পুলিশ। রাজধানীতে প্রবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয় পুলিশের বিশেষ তল্লাশি চৌকি। আটক করা হয় দুই যুবদল কর্মীকে। এ ছাড়া রূপগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী গণপরিবহন মঙ্গলবার অজ্ঞাত কারণে বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
জানা যায়, সোমবার রাত থেকেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা বাইপাস, চনপাড়া ও পূর্বাচল ৩ শ’ ফিট সড়কের রাজধানীতে প্রবেশের ৬ পয়েন্টে বসানো হয় পুলিশের বিশেষ তল্লাশি চৌকি। এসব চেক পয়েন্টে প্রতিটি গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করা হয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তিগণকে রাজধানী প্রবেশে বাধা দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দেন তারা। এ ছাড়া মঙ্গলবার সকাল থেকেই রূপগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী গণপরিবহন অজ্ঞাত কারণে বন্ধ ছিল। রাস্তায় চলেনি মেঘলা, গ্লোরি ও আশিয়ান পরিবহনের কোনো বাস। মেঘলা পরিবহনের পরিচালক শাহ আলম সাহা দাবি করেন, জনসভায় রিজার্ভ থাকায় তারা রাস্তার গাড়ি চালাতে পারেননি। অন্যদিকে গত সোমবার রাতে উপজেলার  ভোলাব ইউনিয়ন যুবদল নেতা কাজী নাজিমুদ্দিন ও ভুলতা ইউনিয়ন যুবদল নেতা রফিকুল ইসলামকে আটক করে নাশকতার মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ডাকে গণস্রোত তৈরি হয়েছে। বাধা আর মামলা-হামলা দিয়ে স্রোত ঠেকানো যায় না। পুলিশের বাধা নির্যাতন সহ্য করে বিকল্প রুটে আমার নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, সমাবেশে যেতে কাউকে বাধা কিংবা কোনো ধরনের পুলিশি তৎপরতা চালানো হয়নি। নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসেবে পুলিশ চৌকি বসানো হয়েছে দাবি করে ওসি বলেন, যাদের আটক করা হয়েছে তারা নাশকতা মামলার আসামি।

No comments

Powered by Blogger.