সিইসিকে সরিয়ে দেয়ার দাবি ড. কামালের

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাকে সরিয়ে একজন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিকে এ পদে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, আমরা আগেও সিইসির প্রতি অনাস্থা জানিয়েছি। আমরা তার সঙ্গে কথা বলেও সন্তুষ্ট নই। এজন্য আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (রিপ্লেস) পরিবর্তন চাই। আমাদের দাবি হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিবর্তে একজন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিকে এ পদে দায়িত্ব দেয়া উচিত।
তিনি একজন বয়স্ক মানুষ ও সিনিয়র অফিসার। আমি আগেও বলেছি আপনার ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) আমসাআ আমিন ও একুশে টিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম গণফোরামে যোগ দেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলে নতুন যোগদানকারীদের স্বাগত জানান গণফোরাম সভাপতি।
ড. কামাল আরো বলেন, আপনার (সিইসি) কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের মত পরিবর্তনও করতে পারি। যদি দেখি, আগে যাই করছেন, আজকে থেকে আপনি নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন। গ্রেপ্তার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, কোন লোককে ধরানোর ব্যাপারে আপনি আদেশ দিচ্ছেন, ভেঙে বলুন, তথ্য সহকারে বলুন। যাতে আমরা এটা যাচাই করে দেখতে পারি যে আপনি যুক্তিসঙ্গত কারণে ধরাচ্ছেন, নাকি সরকারের একজন সহায়ক হিসেবে করছেন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, যেভাবে ধরপাকড় ও অন্তরীণ করা হচ্ছে, তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। আমরা বলতে চাই, পাইকারি হারে গ্রেপ্তার বন্ধ করা দরকার। বিএনপি নেতা, কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীকে আদালতে হাজিরের আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখান ড. কামাল। পুলিশকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসেবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। কামাল হোসেন বলেন, গণগ্রেপ্তার হচ্ছে। জেলখানা কীভাবে ভর্তি হয়ে গেছে, আমরা পরিসংখ্যান দেব। সেখানে লোক রাখারও সুযোগ নেই। এটা তো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হতে পারে না। সরকারি দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন প্রটোকলসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কিন্তু বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে তিনি মনে করেন। ইভিএম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা বাতিল হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গণভবন, মন্ত্রীদের বাসভবন ও সরকারি অফিস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ১৪(১), ১৪(২) হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে দেশে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের পুরোপুরি কর্তৃত্বের মধ্যে থাকলেও আজ-অবধি তা দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আইনবহির্ভূতভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী বিরোধী পক্ষের ওপর হাজার হাজার হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। এমনকি নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবে তাদেরকেও উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মামলা দেয়া হচ্ছে। উক্ত ব্যক্তিরা যাতে অল্প সময়ে জামিন পেতে না পারে, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সরকারি দলের প্রার্থী ও মন্ত্রীরা দাপটের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার ও ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন তাদের প্রটোকলসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের প্রার্থীদের যার যার নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এমনকি প্রার্থীদের এলাকায় নিজ বাড়িতে কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক ও মতবিনিময়ের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে। সভার উপরে বিধি নিষেধ দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের সভা থেকে গ্রেপ্তর করা হচ্ছে।
গণফোরামে যোগদানের পর অনুষ্ঠানে ২০০১ সালের নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী আমিন বলেন, আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, জেলা পরিষদেও দায়িত্ব পালন করেছি। একটা পর্যায়ে আমি সরে আসতে বাধ্য হই, সরে এসেছি। আমি মনে করি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যে প্লাটফরম দাঁড়িয়েছে, এই প্লাটফরমের মাধ্যমে আমি কাজ করতে পারবো। এই নেতৃত্বের জন্য আমি গর্বিত। ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের প্রতি আমি গর্বিত। আমার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমি যখন অক্সফোর্ডে পড়াশুনা করতাম, তখন উনি সেখানে অধ্যাপনা করতেন। এখনই সময় সবাইকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দেশের ভবিষ্যৎ, কী রকম বাংলাদেশ চাই, সেই ধরনের বাংলাদেশের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের শাসনামলের সাড়ে ৯ বছরে দেশে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করেন রেজা। সালাম বলেন, ২০১৫ সালের ২৫শে নভেম্বরে ইটিভি দখল হয়েছে। আজকে সেদিনটি। আমি আড়াই বছর যাবৎ জেলে ছিলাম। সত্যের জন্য এবং এই মিডিয়ার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে আমার এই অবস্থা। আমি মনে করি, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পরিবর্তন হবে। এখন যে দুঃসহ অবস্থা, এর পরিবর্তন হবে। আমরা একটা সুন্দর দিন পাব।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান, ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.