শাহবাগে সমাবেশ দুর্ভোগ চরমে: অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ঘোষণা

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কয়েকটি সংগঠন। সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে শাহবাগে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। বুধবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে আন্দোলনে নেমেছে কয়েকটি সংগঠন। গতকাল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এ নিয়ে এক সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করার আগ পর্যন্ত সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলবে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত অবরোধ চলবে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে অবরোধ চলবে।
পরিপত্র স্থগিত করে আগামী সোমবারের মন্ত্রী সভার বৈঠকে তা প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের একদফা একদাবি। তিনি বলেন, আমরা দেশের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে বাঁচতে চাই না। আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে এখানে এসেছি, ভিক্ষার জন্য আসিনি। এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদেও দাবি না মানা পর্যন্ত আপনারা অবরোধ চালিয়ে যাবেন। গতকাল দুপুর ২টার পর থেকে শাহবাগ চত্বরে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন ব্যানারে জড়ো হতে থাকেন অনেকে।
চারপাশের সড়ক বন্ধ করে তারা ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’ ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ’জামায়াত-শিবির-রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’ স্লোগান দিতে থাকেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তারা তাদের সমাবেশ চালিয়ে যান। সমাবেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাধবপুরসহ আরো কিছু জেলার ব্যানার দেখা যায়। সমাবেশ চলাকালীন সময়ে শাহবাগ চত্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কাঁটাবন, বাংলামোটর, মৎস্য ভবনগামী সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। আশেপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যান চলাচলে ধীরগতি ছিল। শাহবাগ মোড় দিয়ে ডাইভারশন থাকায় পথচারীরা টিএসসি দিয়ে ঘুরে গন্তব্যে যান। বাংলামোটর ও প্রেস ক্লাবগামী গাড়িগুলো দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা পড়ে। ঢাকা মেডিকেল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে আসা এম্বুলেন্স প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয়। সমাবেশের পাশেই শাহবাগ পুলিশ বক্সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
পঞ্চগড় থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নাজমুল বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৩০ ভাগ কোটা পুনর্বহাল করা উচিত। এজন্য অবস্থান নিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা ও মুজিব বাহিনীর সদস্য কাজী শাহজাহান বলেন, কোটা বাতিলের মাধ্যমে রাজাকাররা আবারও ষড়যন্ত্র করছে। কোটা বাতিল করে আমাদের অসম্মান করা হয়েছে। আমরা আমাদের সম্মান চাই, অধিকার চাই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা দেশ নিয়ে এলো আর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেয়া হলো, এটা দুঃখজনক। আমরা বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্ববহাল চাই। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগসহ সারা দেশে আমাদের অবস্থান ও অবরোধ চলবে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ফেডারেশনের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন মাসুদ বলেন, আমাদের একটাই দাবি ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল চাই। এটা পুনর্ববহাল না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করবো। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে রাজপথে জীবন দেব তবুও রাজপথ ছেড়ে যাবো না।

No comments

Powered by Blogger.