দেশের ৪১ শতাংশ পরিশোধিত পানিতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া -বিশ্বব্যাংকের গবেষণা

পানি ও স্যানিটেশনের সুযোগে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করলেও সব ধরনের পরিশোধিত পানির ৪১ শতাংশের মধ্যে ক্ষতিকর জীবাণু ‘ই.কোলাই’ রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে সব ধরনের মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দারিদ্র্য সংক্রান্ত’- শীর্ষক  প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর শিরিন জুমা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুখসানা কাদের, বিশ্বব্যাংকের প্র্যাকটিস ম্যানেজার তাকুয়া কামাতা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জর্জ জোসেপ বলেন, পানি ও স্যানিটেশনের সুযোগে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করলেও পানির সব ধরনের উন্নত উৎসের ৪১ শতাংশে ক্ষতিকর জীবানু ‘ই.কোলাই’ রয়েছে। এতে অন্ত্রে উচ্চমাত্রার দূষণের প্রমাণ মেলে। বাংলাদেশে ১৩ শতাংশ পানির উৎস আর্সেনিক দূষণের জাতীয় মাত্রার উপরে রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে আর্সেনিক দূষণের পরিমাণ বেশি।
তিনি জানান, শহরের ৫২ শতাংশ ও গ্রামের মাত্র ২৭ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পাইপলাইনে পানির ব্যবস্থা আছে। সেখানে স্বল্পতা আছে সাবান ও স্যানিটেশনের সুযোগের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহস্থালিতে স্যানিটেশনের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে এখনো সেই সুবিধা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের মাত্র ৫২ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানায় টয়লেট রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র অর্ধেকের মতো স্কুলে। আর ১০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে টয়লেট আছে একটি, যা জাতীয় গড়ের অর্ধেক।
স্কুলের ভালো স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় মাসিক ঋতুস্রাবের সময়ে ২৫ শতাংশ ছাত্রী অনুপস্থিত থাকে বলে জানান এই বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বর্তমানে সারা দেশে ৫ কোটি মানুষ টয়লেট শেয়ার করে। অর্থাৎ একাধিক পরিবারের লোকজন একটি টয়লেট ব্যবহার করে। এই সংখ্যা গ্রামে যেমন রয়েছে তেমনি শহরেও রয়েছে। তবে শহরের বস্তি এলাকায় টয়লেট শেয়ারের সংখ্যা গ্রাম এলাকার লোকজনের তুলনায় তিনগুণ বেশি। ফলে এসব লোকজন নানা প্রকার রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে দ্রুত দারিদ্র্যবিমোচন হচ্ছে। তাই, দারিদ্র্যবিমোচনের পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, শহরাঞ্চলের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। পানি ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার ডেলটা প্ল্যান গ্রহণ করেছে। আগামী ১০০ বছরে পানি ব্যবস্থাপনায় কী কী করা হবে তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় অনেক লবণাক্ত পানির কারণে নানা রকম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর শিরিন জুমা বলেন, বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হিসাবে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন। পানির দূষণ ও নিম্নমান এবং স্যানিটেশনের বাজে অবস্থা অনেক অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তিনি বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি হিসাব দিয়েছিল, বৈশ্বিকভাবে পানি ও স্যানিটেশনে নিশ্চিতে যদি ১ ডলার খরচ করা হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ওটার বিপরীতে লাভ আসবে ৫ ডলার।

No comments

Powered by Blogger.