সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পালামেন্টে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাসহ হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস হয়। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পাস হওয়া প্রস্তাবের আইনগত ভিত্তি নেই। ইইউ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পাস হওয়া প্রস্তাব মানার ক্ষেত্রে কোনও আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে না।
তুর্কি বাগদত্তার সাথে বিয়ের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র আনতে গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করার পর নিখোঁজ হন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ও স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুরুতে অস্বীকার করলেও ১৯ অক্টোবর  সৌদি জানায়, তুরস্কের ইস্তাম্বুল কসন্যুলেটে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে খাশোগির মৃত্যু হয়। এর দুদিন পরই খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তাদের দাবি ছিল জিজ্ঞাসাবাদের সময় উত্তেজিত খাশোগির মুখ চেপে ধরে চিৎকার থাকাতে গেলে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তারা।
খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের পর দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছ, ‘সৌদি আরব থেকে দেওয়া ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।’  খাশোগির হত্যাকাণ্ড মূলত ‘সৌদি আরবে মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, লেখক ও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়নের অংশ।’  এ ঘটনায় সৌদিবিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঙ্গে সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট সন্দেহভাজনদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণের মতো পৃথক পৃথক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এমন নিষেধাজ্ঞাই সৌদি আরবকে কঠিন বার্তা পৌঁছে দেবে। ডাচ এমপি মারিয়েতজ শ্যাকে বলেন, ‘সৌদি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ নিষোজ্ঞা তারা প্যারিসে কেনাকাটা করতে পারবেন না, ইউরোপের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পাঠাতে পারবে না।’
কয়েকদিন আগেই প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিলো জার্মানি। রবিবার চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছিলেন, ‘খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্ত্র বিক্রি সম্ভব না।’ যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে সৌদি আরব। দুই দেশই খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি আরবের সমালোচনা করেছে। তবে এখনও জার্মানির মতো অস্ত্র বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়নি তারা।  যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক দফতরের মতে, সৌদি আরবের কাছ গত বছর ১৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে তারা। বাস্তাবে এর পরিমাণ আর বেশি হতে পারে। আর ফ্রান্স বিক্রি করছে ১৪৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র।
ইইউর এই প্রস্তাব পাশের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা দুজনই সৌদি বাদশাহর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ম্যাক্রো সৌদি বাদশাহ খাশোগি হত্যার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। ফ্রান্স বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে।  এর আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টও বলেছিলেন, ‘আমরা যেমন ঘটনা শুনছি তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে সেটা আমাদের মূল্যবোধ বিরোধী। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।  তবে ফ্রান্স কিংবা যুক্তরাজ্য অস্ত্র বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেনি।

No comments

Powered by Blogger.