পদ্মার পাড়জুড়ে হাহাকার, আরো ২০ বাড়ি বিলীন by শেখ খলিলুর রহমান

নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। শনিবার সকাল থেকে শুরু করে রোববার বিকাল পর্যন্ত ২০টি পাকা বাড়ি ও  সেমিপাকা টিনের ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মার পাড়জুড়ে চলছে মানুষের হাহাকার। সবকিছু হারিয়ে মানুষের মাথাগোঁজার ঠাঁই নাই।
কান্নায় গোটা এলাকা ভারী হয়ে উঠেছে। শনিবার বিকালের পর ভাঙনের তীব্রতা কমলেও যেকোনো মুহূর্তে রাক্ষসী পদ্মা ভয়াল রূপ ধারণ করতে পারে। এ আতঙ্কে মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে ছোটাছুটি করছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে বেশির ভাগ মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। থাকছে অনাহারে-অর্ধাহারে। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন, কেউবা ঢাকাও চলে গেছেন। সরকারি ত্রাণ তুলনামূলক অনেক কম।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। ত্রাণ আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দেবো। প্রায় ২/৩ মাস ধরে পদ্মা নদী ভাঙছে। তিনটি ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার ২ ও ৪ নং ওয়ার্ড পদ্মার স্রোতের টানে নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচরের ইশ্বরকাঠি, শেহের আলী মাদবরকান্দি, পাচুখাঁরকান্দি, চর জাজিরা, সাহেবের চর, চর জুজিরা, ওয়াপদা, সাধুর বাজার, বাসতলা, পূর্ব নড়িয়া, মুলফৎগঞ্জবাজার, গাজী কালুর বাড়ি, লাইফ কেয়ার ক্লিনিক, হেলথ কেয়ার, নড়িয়া ৫০ শয্যা হাসপাতাল, লস্করদের বাগানবাড়ী, দাসপাড়া, ঘোষপাড়া, শ্রী শ্রী সত্য রাম মন্দির, দাসপাড়া কালীমন্দির ও চণ্ডিপুর। এ ছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি, গাছপালা ও কাঠ গাছের বাগান, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
দুইদিনে নড়িয়া উপজেলার  চর জুজিরা, কেদারপুর, বাসতলা, বাগানবাড়ী, উত্তর কেদারপুর এলাকার হুমায়ুন কবির বেপারি, সোহেল দেওয়ান, আলী আকবর. সফিক, মনির সরদার, সুকুমার রায়, দুলাল হাওলাদার, সবুজ, রাজ্জক, মফেজ, মকবুল জসিম, আমির হোসেন, আরিফ দেওয়ান, হাবিব, নুরু ঢালী, ইদ্রিস মৌলভী, গিয়াস মোড়লসহ এরকম অনেকের ঘরবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে খাদ্য গুদাম, পোস্ট অফিস, মুলফৎগঞ্জ বাজারের ৯টি দোকান, সুরেশ্বর দরবার শরীফ, সুরেশ্বর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা  ইত্যাদি।
শরীয়তপুর জেলা প্রতিবন্ধী আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির বলেন- আমার ৪ কাঠা জমির উপর বাড়ি ছিল। পদ্মা নদী আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। আমি এখন গাছতলায় থাকি। আমার তো কিছু রইলো না। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকার জন্য কষ্ট করে সেমিপাকা ঘর করেছিলাম। বাড়িঘর সবই পদ্মায় নিয়ে গেল।
আমার তো এখন মাথাগোঁজার ঠাঁই নাই। পদ্মা নদী ভাঙন এলাকায় গতকাল দুপুরে পরিদর্শনকালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন- আগামী সোমবারের মধ্যে পদ্মা নদীর ড্রেজিং কাজ চলবে এবং পানি কমার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করতে পারবো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের, নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন, শরীয়তপুর জেলার পানি উন্নয়ন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.