রোহিঙ্গা প্রশ্নে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান পাল্টায়নি এখনো

সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা নিপীড়ন বিরোধী প্রস্তাবে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন না পাওয়ায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। তার মতে, এ নিয়ে জাতিসংঘে দফায় দফায় প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে কিন্তু তাতে ধারাবাহিকভাবে ভেটো প্রদান করে আসা চীন ও রাশিয়ার অবস্থান এখনও পাল্টায়নি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিকীকরণের পরিবর্তে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা এবং দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার পক্ষেই অবস্থান চীন ও রাশিয়ার। তবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হলেও বাংলাদেশ বারবার বলে আসছে, আন্তর্জাতিক চাপ সরে গেলে মিয়ানমার তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করবে। এ কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সব ফোরামেই মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার নীতি নিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
সেই বৈঠকে রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব আসে পশ্চিমা দুনিয়া থেকে। কিন্তু তাতে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে বিরোধিতা করে চীন ও রাশিয়া। দেশ দুটি মিয়ানমারের পক্ষে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করে। সেই বিতর্কে জাতিগত নিধনযজ্ঞের জন্য মিয়ানমারের তীব্র সমালোচনা করে পরিষদের স্থায়ী ৩ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ফ্রান্সসহ অস্থায়ী প্রায় সব সদস্য। সেই সমালোচনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে (ভোটো প্রদান করে) চীন ও রাশিয়া প্রস্তাবটি আটকে দেয়। ফেব্রুয়ারির আগেও একাধিকবার নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে আলোচনা হয় এবং সেখানে নিন্দা প্রস্তাব পাসের চেষ্টা ছিল মানবাধিকার সংবেদনশীল রাষ্ট্রগুলোর। কিন্তু চীন ও রাশিয়া তাতে আপত্তি দিয়েছে, ভেটো প্রদান করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে আল-জাজিরা জানতে চায় রাশিয়া ও চীনের ভেটো বন্ধে ঢাকার তরফে কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে কি না?
জবাবে এ নিয়ে হতাশাসূচক জবাব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘তাদের মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা বোঝাতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তারপরও এ প্রশ্নে যদি আগামীকালও ভোট হয় তারা তাদের একই অবস্থান বজায় রাখবে।’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছে। সে প্রসঙ্গ টেনে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘১৫ সদস্য দেশের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে আসার মধ্যদিয়ে দারুণ একটি কাজ করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। তারা সবাই মিডিয়ায় কথা বলেছে, তাদের মতামত জানিয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে। একইসময়ে তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ ও তাদের চ্যালেঞ্জগুলো বুঝতে পেরেছেন। নিরাপত্তা পরিষদের ১৩টি দেশের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার পার্থক্য হলো এ দুই দেশ মনে করে আমাদের ঠাণ্ডা মাথায় থাকতে হবে, ধীর গতিতে চলতে হবে।’ উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫শে আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো হয়।
হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। আর তার আগে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তিন লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিডো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাছাড়া, জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়।

No comments

Powered by Blogger.