ভিন্ন পেশার লোক হলেও তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দল

পেশায় তারা কেউ গার্মেন্ট শ্রমিক, কেউ দর্জি, কেউ বাসচালক কেউ বা জমির দালাল। এই কাজের বাইরেও তারা অর্থ উপার্জন করে। দিনের আলো ম্লান হয়ে রাতের অন্ধকার নেমে এলে তারা ছিনতাইয়ে নামে। বিভিন্ন ব্যাংকসহ আর্থিক  প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে টাকা ছিনতাই করতো এই চক্র। গত বুধবার চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলো- স্বপন মাহমুদ (৪৯), রুবেল (৩৫), সাগর বাড়ৈ (৩৫), মো. বাবুল (৩৬), মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫), ইউসুফ আলী (২৮) ও আনোয়ার হোসেন (২৮)।
তাদের কাছ থেকে তিনটি বিদেশি অস্ত্র ও ১৬ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রাকিবুজ্জামান জানান, গত ১৩ই মে গাজীপুর জেলার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার উনিশে টাওয়ারের নিচে রবি ও বিকাশের এজেন্টের ১৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এরপর র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে গত বুধবার রাত ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তরা এলাকা থেকে এই সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 
তিনি আরো জানান, গত ১৩ই মে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার উনিশে টাওয়ারের নিচে একদল ছিনতাইকারীরা রবি ও বিকাশের এজেন্ট মো. আসাদুর রহমান আসাদ ও ইকবাল হোসেনের ১৫ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় একই প্রতিষ্ঠানের সুমন মল্লিক নামের একজন কর্মী আহত হন। গ্রেটওয়াল হাউজিং সোসাইটির নিজ প্রতিষ্ঠান জমাদ্দার এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক পদে মো. আসাদুর রহমান আসাদ ও সহকারী হিসাব রক্ষক পদে ইকবাল হোসেন এবং স্টোর ম্যানেজার পদে সুমন মল্লিক নিয়োজিত। জমাদ্দার এন্টারপ্রাইজ একটি রবি ও বিকাশ এজেন্টভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরো জানান,  র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারী চক্রটির প্রধান সাগর ও তার অন্যান্য সহযোগী গত ১৩ই মে গাজীপুর জেলার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার উনিশে টাওয়ারের নিচে রবি ও বিকাশের দুই জন এজেন্টকে গুলি করে ১৫ লাখ টাকা ছিনতাই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। সাগর জানায় যে, তারা বিগত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করার জন্য প্রস্তুতি নিলেও বিভিন্ন কারণে সফল হতে পারেনি। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, রুবেল (৩৫) পেশায় একজন দর্জি। রাজধানীর নিউমার্কেটের গাউছিয়া মার্কেটে দর্জির কাজ করে। ২০১৭ সালে আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে নিহত ছিনতাই চক্রের সদস্য আনোয়ারের মাধ্যমে রুবেল এ চক্রে যোগ দেয়। সাগর ও রুবেল পরস্পর যোগসাজশে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি ক্রয় করে ছিনতাই কাজে ব্যবহার করে বলে স্বীকার করে। এক্ষেত্রে অস্ত্র সরবরাহকারী ছিনতাই করা অর্থের দ্বিগুণ টাকা নেয়। এছাড়াও, সাগর পেশায় একজন মুহুরি। সে ২০০০ সাল হতে এই পেশায় নিয়োজিত আছে। ২০১৭ সালে আনোয়ার আশুলিয়ায় পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে সাগর ছিনতাই চক্রটির নেতৃত্ব দেয়।
তিনি আরো জানান, বাবুল পেশায় একজন সেলসম্যান। সে নিউমার্কেটের চাঁদনী চক মার্কেটে একটি দোকানে কাজ করে। কাজের সূত্র ধরে একই মার্কেটে কর্মরত রুবেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বাবুলের বিরুদ্ধে আশুলিয়া ও সাভারে একাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা থাকায় হাইকোর্টের মুহুরি সাগরের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। সাগর ও রুবেলের মাধ্যমেই সে ছিনতাই চক্রে যোগ দেয়। রাকিবুজ্জামান আরো জানান, আনোয়ার হোসেন পেশায় একজন গাড়িচালক। সে ২০০৫ সালে ঢাকায় আসে। সে বিমানবন্দর এলাকায় ভাড়ায় ট্যাক্সিক্যাব চালায়। মাদক ব্যবসার দায়ে একবার জেলে যায় এবং সেখানে তার সাগরের সঙ্গে পরিচয় হয়। দুই মাস পর জেল থেকে বের হয়ে আনোয়ার ও সাগরের সঙ্গে ওই ছিনতাইচক্রে যোগ দেয় এবং নিয়মিত ছিনতাই কাজে অংশ নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, স্বপন মাহমুদ পেশায় একজন জমির দালাল। ১৯৮৮ সালে আসামি স্বপন ঢাকায় আসে এবং একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরি নেয়। পরবর্তীতে সে সৌদি আরব যায় এবং প্রতারণার শিকার হয়ে চার মাস পর দেশে ফিরে আসে। সে ২০১৬ সালে সাগর, বাবু ও রুবেলের সঙ্গে ডাকাতি ও ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার হয়। অন্যদিকে ইউসুফ আলী পেশায় একজন পোশাককর্মী। ২০০৮ সালে সে ঢাকায় আসে এবং সাভারে একটি সোয়েটার গার্মেন্টসে দীর্ঘদিন শ্রমিকের কাজ করে। কাজের সূত্র ধরে ২০১৭ সালে আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে নিহত আনোয়ারের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তার মাধ্যমে বেশি উপার্জনের লোভে এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তিনি আরো জানান, এদের পেশা ভিন্ন হলেও তারা ঢাকার বিভিন্নস্থানে ছিনতাই করতো। এদের অন্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। র‌্যাব-১ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.