আগস্টে আসছে বিমানের ড্রিমলাইনার, যাচ্ছে না দূরের গন্তব্যে by চৌধুরী আকবর হোসেন

বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান আগস্টের শেষ সপ্তাহে যুক্ত হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে। এটি দিয়ে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে ১ সেপ্টম্বর। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম হলেও বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ব্যবহার হচ্ছে না দূরপাল্লার যাত্রায়। বরং শুরুতে সিঙ্গাপুর আর মালায়শিয়া রুটে এ বিমান ব্যবহার করবে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা-সিঙ্গাপুর এবং ঢাকা-মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট চালু হবে। ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর যেতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিট আর মালায়শিয়া যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। যদিও দূরপাল্লার যাত্রার জন্য বিশেষভাবে তৈরি ড্রিমলাইন বিমান।
কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এ বিমানটি ওজনে হালকা। দীর্ঘ ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সে জন্য এর ভেতরে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম অন্যান্য বিমানের তুলনায় উন্নত। অন্যান্য বিমানের তুলনায় এর জ্বালানিও লাগবে ২০ শতাংশ কম।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান রোম, আমেরিকা, লন্ডন ও কানাডা রুটে পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা ছিল। এছাড়া, পরে অন্য বিমানগুলো বহরে যুক্ত হলে কলম্বো, হংকং ও গুয়াংজু রুটে পরিচালনা হবে। তবে এসব রুটের কোনোটিতেই ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পায়নি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে এ জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে দায়ী করছেন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) থেকে ‘ক্যাটাগরি রেটিং ১’ অর্জনে সক্ষম হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশি কোনও এয়ারলাইন্স দেশটিতে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না। যদিও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি রেটিং অর্জনে আশাবাদী। বাংলাদেশে সেফটি ওভারসাইট কার্যক্রম নিরীক্ষা করতে একটি টেকনিক্যাল রিভিউ সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। এফএএ-এর চূড়ান্ত মূল্যায়ন শেষ হবে আরও দুটি কারিগরি সমীক্ষার পর। এই সমীক্ষা সফলতা অর্জন করলে সিভিল এভিয়েশন এফএএ-এর ‘ক্যাটাগরি রেটিং ১’ অর্জনে সক্ষম হবে। এর ফলে বাংলাদেশে থেকে সরাসরি নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, বহরে যুক্ত হতে যাওয়া চারটি ড্রিমলাইনার বিমানের নাম পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানগুলোর নাম রাখা হয়েছে ‘আকাশবীণা’, ‘হংসবলাকা’, ‘গাঙচিল’ ও ‘রাজহংস’। ২০ আগস্ট আসতে যাওয়া ড্রিমলাইনারে গায়ে নাম লেখা হয়েছে ‘আকাশবীণা’। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে নেওয়া হয়েছে রেজিস্ট্রেশন (এস২-এজেএস)। বিমানটিতে আসন সংখ্যা ২৭১টি; এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি এবং ইকোনমিক ক্লাস ২৪৭টি ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা রয়েছে নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করার। কিন্তু সিভিল এভিয়েশনের ক্যাটাগরি -১-এ না আসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি মিলছে না। এছাড়া, অন্যান্য দেশগুলোতে ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা আছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের কূটনৈতিক সহায়তা প্রয়োজন। অন্যদিকে লন্ডন রুটে ড্রিমলাইনার ব্যবহার করা যেতো, কিন্তু বর্তমানে এ রুটে বোয়িং ৭৭৭ বিমান ব্যবহার হচ্ছে। বোয়িং ৭৭৭ বিমানে ৪১৯ জন যাত্রী পরিবহন করা যায়, কিন্তু ড্রিমলাইনারে আসন ২৭১টি। আসন সংখ্যা কম থাকায় বর্তমানে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তবে এ রুটে নতুন ফ্লাইট দিলেই ড্রিমলাইনার ব্যবহার করা যাবে।’
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক ১৫টি রুটের মধ্যে ইউরোপে শুধু লন্ডন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। বাকিগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রুটে সীমাবদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্যের দোহা, কুয়েত, রিয়াদ, জেদ্দা, আবুধাবি, দাম্মাম, দুবাই ও মাস্কাটে এবং এশিয়ায় ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, কলকাতা, ইয়াঙ্গুন ও কাঠমান্ডুতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সেবা দেবে প্যানাসনিক এভিওনিকস করপোরেশন (Panasonic Avionics Corporation)। বিমানে উড্ডয়নের সময় যাত্রীরা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। বিমানে ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক যাত্রী ১৫ মিনিটের জন্য ১০ মেগাবাইট ইন্টারনেট বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এরপর কোনও যাত্রী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে চার্জ দিতে হবে। ১০০ মেগাবাইটের জন্য ৮ ডলার, ৩০০ মেগাবাইটের ১৬ ডলার, ৬০০ মেগাবাইটের জন্য ৩২ ডলার হারে চার্জ দিতে হবে যাত্রীদের। এছাড়া যাত্রীদের মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে উড্ডয়নের সময় ফোন কল করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘দুটি দেশের সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি না পেলে ফ্লাইট চালু করা সম্ভব নয়। আমাদের আধুনিক বিমান থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে নতুন রুটে ফ্লাইট চালু করতে দেরি হচ্ছে। ম্যানচেস্টার, রোম, সিডনি, মন্ট্রিয়ল, দিল্লি, হংকং ও টোকিওতে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন পাওয়া গেলে এসব রুটে ফ্লাইট চালু করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.