তিন সিটি এক পরীক্ষা

রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটিতে আজ ভোট। পৌনে নয় লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এ তিন সিটিতে। মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী। প্রথমবারের মতো তারা দলীয় প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন। জাতীয়  নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে অনেকটা উৎসবের আমেজেই চলেছে প্রচার-প্রচারণা। তবে শুরু থেকেই ভোট নিয়ে ছিল ভয় আর শঙ্কা। শেষ মুহূর্তে তা আরো বেড়েছে। কেমন ভোট হবে আগে থেকে হলফ করে বলার মতো পরিবেশ ছিল না তিন সিটিতেই। বিরোধী প্রার্থীদের শত অভিযোগে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভাসলেও প্রতিকারের কোনো দাওয়াই ছিল না তাদের হাতে। নির্বাচন কমিশন আর প্রার্থীদের আলোচনা ছাপিয়ে তিন সিটিতেই সামনে এসেছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা। যেমনটি দেখা গিয়েছিল খুলনা ও গাজীপুরের ভোটে। বাতাসে ভেসে বেড়ানোর গুঞ্জনই সত্য হয়েছিল ভোটের ফলে। সর্বশেষ তিন সিটির ভোটেও সারা দেশের চোখ। বাতাসে নানা গুজব-গুঞ্জন। আগাম ফলের বার্তাও এসেছে ভোটের একদিন আগে। এতে গুজবের ডালপালা মেলেছে বহুদূর। খুলনা-গাজীপুরের মতো দখল-অনিয়মের ভোট হবে নাকি নয়া কোনো তরিকায় তিন সিটি দখলের মহড়া হবে এমন প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে তিন সিটির নির্বাচনকে নিজেদের জনপ্রিয়তার পরীক্ষা হিসেবে দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। আর রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়ে দুই ধরনের পরীক্ষা দিতে চায়। সুষ্ঠু ভোট হলে বড় জয় নিয়ে বার্তা দিতে চায় দলটি। আর দখল-অনিয়মের ভোট হলে এটিও দেশবাসীর সামনে এক ধরনের বার্তা হিসেবে উপস্থাপন করবে বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে তিন সিটির নির্বাচন ইসির সামনেও বড় এক পরীক্ষা। তিন সিটি করপোরেশনের ১৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হবে। এর মধ্যে বরিশালে সর্বাধিক ১১টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। এ নগরীতে ইভিএম কেন্দ্রে ভোট দেবেন প্রায় ২৫ হাজার ভোটার। সিলেট এবং রাজশাহীতে দুটি করে কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। তিন সিটিতেই কর্মী সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীরা। গতকাল রাজশাহীতে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল জানিয়েছেন, তার ২৪ জন পোলিং এজেন্টের খোঁজ মিলছে না শনিবার রাত থেকে। বরিশালে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য প্রার্থীরা গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বহিরাগতরা ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। নগরীর আশপাশে হাজার হাজার বহিরাগত জড়ো হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। প্রার্থীরা জালভোট ও কেন্দ্র দখল ঠেকাতে একসঙ্গে মাঠে থাকার কথাও জানিয়েছেন। সিলেটে পরিবেশ দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ হলেও নানা শঙ্কা আর ভয় নিয়েই কেন্দ্রে যাবেন ভোটাররা। ভোটে অনিয়ম ঠেকাতে শক্ত অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। যদিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানিয়েছেন শান্তিপূর্ণ ভোট হবে সিলেটে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও আশা প্রকাশ করেছেন খুলনা-গাজীপুরের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না তিন সিটিতে।
ভোট ঘিরে নির্বাচন কমিশন শেষ করেছে সব ধরনের প্রস্তুতি। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। তিন সিটির নির্বাচনী এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসারসহ ২২জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারদের সমন্বয়ে মোবাইল টিম, প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে র‌্যাবের একটি টিম, প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটগ্রহণের দিন এবং তার আগের দুইদিন ও পরের একদিনসহ মোট ৪দিন মোতায়েন থাকবে। ভোটগ্রহণের পরের দুইদিন পর্যন্ত প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া নির্বাচনী অপরাধ বিচারার্থে আমলে নেয়ার জন্য প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাজশাহী সিটিতে ৩০টি ওয়ার্ডের ১৩৮ ভোটকেন্দ্রে কক্ষের সংখ্যা ১০২৬টি। এসব ভোটকেন্দ্রে ১৩৮জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১০২৬ কক্ষে সম-সংখ্যক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং কক্ষে দুইজন করে ২০৫২ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। এ সিটিতে মেয়র প্রার্থী ৫ জন।
সিলেট সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে ১৩৪ ভোটকেন্দ্রে কক্ষের সংখ্যা ৯২৬টি। এসব ভোটকেন্দ্রে ১৩৪ জন পিজাইডিং অফিসার, ৯২৬ কক্ষে সম-সংখ্যক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং কক্ষে দুইজন করে ১৮৫৪ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। সিলেটে মেয়র পদে লড়ছেন ৭ জন প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৭ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৬২ জন প্রার্থী।
বরিশাল সিটিতে ৩০ ওয়ার্ডে ১২৩ ভোটকেন্দ্রে কক্ষের সংখ্যা ৭৫০টি। এসব ভোটকেন্দ্রে ১২৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৭৫০ কক্ষে সম-সংখ্যক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং কক্ষে দুইজন করে ১৫০০ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন ও নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। এ সিটিতে মেয়র পদে লড়ছেন ৬ জন মেয়র প্রার্থী।

No comments

Powered by Blogger.