এরশাদ কী বলতে চেয়েছিলেন?

প্রস্তুত বনানী কার্যালয়। ব্যানারও টানানো হয়ে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দিল্লি সফর শেষে আগের দিন বিকালেই ঢাকা ফিরেন তিনি। যে কারণে সবারই আগ্রহ ছিল শোনার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট কী বলেন। কিন্তু হঠাৎই খবর এলো সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ আসবেন না। কী কারণ? বলা হলো না কিছুই । এমনকি আধা ঘণ্টা পর শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনেও দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দিলেন না। জাতীয় পার্টি প্রধান অসুস্থ এমন কোনো কথাও জানানো হয়নি। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে, আর এর আগে-পরে চললো নানা কানাঘুষা। কী বলতে চেয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কেনই বা তিনি সংবাদ সম্মেলন ডেকেও এলেন না।
এরশাদের এবারের ভারত সফর ছিল হাই প্রোফাইল। চার দিনের সফরে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তিনি। বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। এর আগে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিনিধিদল ভারত সফর করে আসে। নির্বাচনের বছরে এসব সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক আর কৌতূহলের শেষ নেই। এমন পটভূমিতে এরশাদ ভারত যাওয়ার পরও ছড়িয়ে পড়ে নানা আলোচনা। ভারতের নীতিনির্ধারকদের তিনি কী বলেছেন, ভারতই বা কী বার্তা দিলো তাকে? মনে করা হচ্ছিলো সংবাদ সম্মেলনে তার কিছুটা হলেও খোলাসা করবেন তিনি। এমনিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ বরাবরই আলোচিত এক চরিত্র। এই ৯০ বছর বয়সেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী নির্বাচনে তার ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আর কৌতূহল দুটোই রয়েছে। 
গত নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই বেঁকে বসেছিলেন এরশাদ। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তাকে অসুস্থ হয়ে যেতে হয়। তার স্থান হয় হাসপাতালে। আর মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে তার স্ত্রী রওশন এরশাদের। নির্বাচনের পর অবশ্য এরশাদ সবকিছু মেনে নেন অথবা মেনে নিতে হয়। গতকাল এরশাদের সংবাদ সম্মেলনে না যাওয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের অসুস্থতার কী কোনো যোগসূত্র আছে। জাতীয় পার্টির কয়েক নেতার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে। এরশাদের ব্যাপারে আসলে সবকিছুতেই অনিশ্চয়তা। সবকিছুতেই নাটকীয়তা। না হয় একটি সংবাদ সম্মেলন নিয়েই বা কেন এত নাটক হবে।
এরশাদের অনুপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় পার্টি মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ যেন বজায় থাকে সেটা ভারত চায়। পাশাপাশি ভারত বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, ভারতীয় নেতৃবৃন্দ আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে তাদের নৈতিক সমর্থন সব সময় থাকবে। হাওলাদার বলেন, আপনারা জানেন- আমাদের এ ভারত সফর নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। অনেক জল্পনা ও কল্পনারও সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন এসেছে কেন আমরা হঠাৎ করে এ সফরে গেলাম।
সেখানে কার সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে, কি আলোচনা হয়েছে, এই সফরে দেশ বা আমাদের দলের জন্যই বা কি অর্জন হয়েছে? আমরা এ সফর নিয়ে দেশবাসী ও মিডিয়াকে ধূম্রজালের মধ্যে রাখতে চাই না বলেই আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সবকিছু অবহিত করতে চাই। ভারতীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, তাদের সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের সঙ্গে বিরাজমান সুসম্পর্ক আরো সুদৃঢ় দেখতে চায়। তারা একান্তভাবে প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ যেন বজায় থাকে।
আরো বলেছেন, ভারত সবসময়ই বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে। ভারতীয় নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখায় জাতীয় পার্টির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থেকেও সরকারের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত। বিরোধী দল মানে শুধু বিরোধিতাই করবে- সরকারের সঙ্গে কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবে না- এই প্রচলিত ধারা থেকে জাতীয় পার্টি বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
এই দৃষ্টান্ত আগামীতে হয়তো আরো অনেক গণতান্ত্রিক দেশ গ্রহণ করতে পারবে। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা জানিয়েছি যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় পার্টি সব সময় সোচ্চার থাকবে। আমরা এখন আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা বলেছি, অত্যন্ত বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আমরা পাইনি। তবুও নির্বাচন থেকে সরে যাইনি। আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক সুসংগঠিত। তাই আশা করছি, আমরা আগামীতে সরকার গঠন করতে পারবো।
ভারতীয় নেতৃবৃন্দ দেশ পরিচালনায় আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতার প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে আমাদের সাফল্য কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা সংবাদ সম্মেলন থেকে আপনাদের একটি বিষয় জানাতে চাই, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের সকল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদেক আবদুল্লাহর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি।

No comments

Powered by Blogger.