ঢাকার চার নদীর তীরে অবকাঠামো নির্মাণের চার কারণ by শফিকুল ইসলাম

বুড়িগঙ্গর তীরে অবৈধ স্থাপনা
ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা— এই চার নদীর তীরে অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মূলত চার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। কারণ চারটি হলো নদীগুলোর তীরভূমির অবৈধ দখল রোধ করা, দখলমুক্ত তীরের সৌন্দর্য বর্ধন করা,  নদীর উভয় তীরের পরিবেশগত উন্নয়ন সাধন করা এবং দখলমুক্ত তীরভূমিতে অবকাঠামো নির্মাণ করে তা ব্যবহার করা।
জানা গেছে, এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ,গাজীপুর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বিস্তৃত ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে যোগান দেওয়া হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর বাস্তবায়ন করবে। আগামী জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হবে এর কাজ।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় মোট ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের ৩৫ দশমিক ৫১ কিলোমিটারই নির্মিত হবে নদীর নিচু তীরভূমিতে । ১০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে নদীর উঁচু তীরভূমিতে। ৫ দশমিক ৯২ কিলোমিটার নদীর তীরভূমিতে কলামের উপর ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা)  নির্মাণ করা হবে। দশমিক ৩০ কিলোমিটার পায়ে হাঁটার সেতু নির্মাণ করা হবে। ৪৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার তীররক্ষা কাজ করা হবে। ১ কিলোমিটার ওয়াল নির্মাণ করা হবে। ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বেড়াসহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। ৩টি ইকো-পার্ক নির্মাণ করা হবে।  ১৯টি জেটি নির্মাণ করা হবে এবং ১ হাজার ৮২০টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে এ চার নদীর তীরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে ৩টি অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর রয়েছে। কিন্তু এসব নদীর তীরভূমির বিভিন্ন জায়গা অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। অবৈধ দখলদাররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নদীর তীরে আরসিসি কাঠামো তৈরি করেছে। ফলে নদীগুলোর প্রশস্ততা এবং নৌচলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অননুমোদিত ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। বিআইডব্লিউটিএ বিভিন্ন সময় নদীর তীরভূমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে এবং এখনও করছে। কিন্তু দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা তীরভূমি সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে ওঠে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর চারদিকে নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল একটি সভাও হয়। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয় ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দুপাশ অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে তীরভূমিতে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রাখতে হবে। পাশাপাশি তীরের জায়গায় জনগণের জন্য বসার বেঞ্চ, ইকো পার্ক, বৃক্ষরোপন ইত্যাদি কাজ হাতে নেওয়া যেতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার নৌপথের মোট ১২০ কিলোমিটার তীরভূমির মধ্যে ১ম পর্যায়ে ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ে ৫২ কিলোমিটার অংশ অন্তর্ভুক্ত করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অংশেও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।
৮৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ করার লক্ষ্যে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হলে ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট প্রস্তাবটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সলের ৫ ডিসেম্বর পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে গৃহীত হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপি-তে কিছু অসংগতি থাকায় তা সংশোধন করে গত ১৩ মার্চ পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে গৃহীত হয়। বর্তমান পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুসারে প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের চেহারা বদলে যাবে। এই শহরের মানুষের জীবনমান বদলে যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.