‘বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন খালেদা’

কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার তীব্রতা এত বেড়েছে যে তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে গিয়েছিল। তারা দেখেছেন- তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। কারাগারে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে তিনি প্রতিদিন অসুস্থ হচ্ছেন। এই অসুস্থতা এমন পর্যায়ে গেছে যে ঠিকমতো তিনি হাঁটতে পারছেন না। প্রতি রাতে তার জ্বর আসছে। এটা যেকোনো সুস্থ মানুষের জন্যও সংকটাপন্ন অবস্থা। আমরা এর আগেও বলেছি খালেদা জিয়ার বাম হাত অবশ হয়ে গেছে। তিনি আগে থেকে আর্থ্রাইটিস ও ব্যাক পেইনে ভুগছিলেন। এগুলো বেড়ে গেছে। গতকাল দুপুরে নয়া পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। মির্জা আলমগীর বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- তার এমআরআই দরকার। ফিজিও থেরাপি দরকার। সেই ফিজিওথেরাপি তিনি পাচ্ছেন না। আমরা যখন কারাগারে ছিলাম তখন কখনোই বিদ্যুৎ যেত না। জেনারেটর দিয়ে সার্ভিস দেয়া হতো। কিন্তু এখন পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। সেটা কোনো দিক দিয়ে কারাগারের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। সেখানে কোনো জেনারেটর নেই। প্রায় বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতি ও হাতপাখা দিয়ে চলতে হয়। বিশুদ্ধ পানির অভাব। খালেদা জিয়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকার এই রকম অমানবিকতা ও হৃদয়হীন আচরণ করছে যার কোনো তুলনা নেই। সারাজীবন তিনি যেটায় অভ্যস্ত তার ন্যূনতম সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। এই অমানবিকতা, নিষ্ঠুর আচরণ তাঁর সাথে করা হচ্ছে। মির্জা আলমগীর বলেন, কারাগারে যারা প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত হন তারা কারাগারের সুবিধার বাইরেও অনেক সুবিধা ভোগ করেন। আমরাও যখন কারাগারে থেকেছি সেগুলো ভোগ করেছি। কিন্তু খালেদা জিয়াকে সেগুলো ভোগ করতে দেয়া হচ্ছে না। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাইরে থেকে কোনো কিছু নিয়ে গেলে সেটাও দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছিল। সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তার কাছে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক অনুরোধ এসেছে যেন খালেদা জিয়ার জামিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কিছুই করেননি। এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার এমআরআই ও সঠিক চিকিৎসা করা দরকার। আমরা মনে করি কোন কালবিলম্ব না করে বিশেষায়িত হাসপাতাল, বিশেষ করে তার পছন্দের ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। মির্জা আলমগীর বলেন, মূল মামলায় দেশনেত্রীর জামিন হয়ে গেছে। তারপরও একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে  বের হতে দেয়া হচ্ছে না। এসব মিথ্যা মামলায়ও হাইকোর্ট থেকে জামিন পাচ্ছেন। সেই জামিনও সরকার আটকে দিচ্ছে। তিনি যেন বের হতে না পারেন তার সকল ব্যবস্থা করছে। এর পেছনে সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত তাকে আটকে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.