হাত হারিয়ে কাতরাচ্ছেন হৃদয়

এবার বাস-ট্রাকের চাপায় হাত হারিয়ে ঢাকা মেডিকেলে কাতরাচ্ছেন খালিদ হাসান হৃদয়। দুই বাসের চাপায় হাত হারানো রাজীব হোসেনের নিথর দেহ যেদিন ঢাকা মেডিকেল থেকে দাফনের জন্য নিয়ে যান স্বজনেরা, একইদিন ডান হাত হারিয়ে হাসপাতালে আসেন হৃদয়। স্বল্প আয়ের সংসারে বাবাকে সহযোগিতা করতে বাসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। কাজ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০২ ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ২৩ বছরের হৃদয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ সদরের বেতগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ট্রাকের ধাক্কায় তার ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হৃদয়ের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে হৃদয়ই সবার ছোট। বড় দুই মেয়ের একজন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। ঘটনার দিন টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের চালকের সহকারী হৃদয় পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী গাড়ির পেছনে বসা ছিলেন। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য ডান হাতটি বাসের জানালার বাইরে রেখে বসলে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের চাপায় তার ডান হাত কেটে যায়। কাটা হাতটি জানালায় ঝুলে থাকার কিছু পর তা সড়কে পড়ে যায়। আহত হৃদয়কে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ধারদেনা করে হৃদয়ের চিকিৎসা চালানো হচ্ছে বলে জানান হৃদয়ের বাবা। ট্রাকের চালক ও হেল্পারকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান ডা. শামসুজ্জামান শাহীন বলেন, রাজীবের লাশ একদিকে ফিরিয়ে দিলাম ঠিক ওইদিনই হৃদয় নামে আরেক তরুণ একইভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছে। দু’জনেরই ডান হাতের ঠিক একই স্থানে কাটা পড়েছে। বয়সও অনেকটা কাছাকাছি। হৃদয়ের উন্নত চিকিৎসায় আমরা তৎক্ষণাৎ আনঅফিসিয়ালি আর্থোপেডিকসের চিকিৎসকরা মিলে বৈঠক করে তার জরুরি অপারেশন সম্পন্ন করেছি। তার মুখে ও মাথায় সামান্য আঘাত রয়েছে তবে সেটা ততোটা গুরুতর নয়। হৃদয়ের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। দুই-তিন দিন পর ডান বাহুর কাটা অংশ ড্রেসিং করা হবে। ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। আপাতত হৃদয়ের অবস্থা ভালো। হৃদয়কে তরলজাতীয় খাবার খাওয়াতে বলা হয়েছে। আগামী ৩-৪ দিন পর্যবেক্ষণের পর তার আচরণের উপর নির্ভর করে সিটিস্ক্যান করা হবে।
পরবর্তীতে তার হাত ড্রেসিং করে প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে। চোখেমুখে তীব্র বেদনার ছাপ নিয়ে হৃদয় বলেন, ‘প্রথমে আমি কিছু বুঝতে পারি নাই। তাকিয়ে দেখি, আমার ডান হাতটা বাসের জানালার সঙ্গে ঝুলছে। এরপর আর কিছু মনে নাই।’ মুখের ডান পাশ ফোলা ও নাকে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে হৃদয়ের। ডান চোখের নিচে ও মাথার পেছনে একাধিক জখম তার। বুকের ডান পাশে ব্যান্ডেজ। হৃদয়ে মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘মঙ্গলবার ভোররাতে হৃদয় প্রবল ব্যথায় ছটফট করলে ইনজেকশন দেয়ার পর ঘুমিয়ে যায়। হৃদয়ের চিকিৎসার খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তার ওষুধসহ বিভিন্নভাবে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এতোদিন বাপ-ছেলে দু’জনের উপার্জনে সংসার চলতো। এখন আমার ছেলেটা কিভাবে আয়-রোজগার করবে জানি না। সংসারের কষ্ট কিছুটা দূরও হয়েছিল। ছোট মেয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ালেখা করছে। হৃদয় উপার্জন করায় এতোদিন মেয়ের পড়ার খরচ চালাতে পারছিলাম।
মঙ্গলবার কাজ শেষে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের আরেকটি বাসে করে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিলেন হৃদয়। বাসের পেছনে জানালার পাশের একটি সিটে বসেছিলেন তিনি। ডান হাত দিয়ে জানালার মাঝখানের রড ধরে ছিলেন। গোপালগঞ্জের বেতগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসের পেছন দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ওভারটেক করতে যায়। হঠাৎ করে ট্রাকটি বাসের পেছন অংশ ঘেঁষে চলে যায়। এতে হৃদয়ের ডান হাতটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.