এটাই কি বাংলাদেশে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার ইতি? by কে এস ভেঙ্কটাচালম

বাংলাদেশের গণতন্ত্র সন্ধিক্ষণে। সম্প্রতি দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির চেয়ারপারসন ও দুবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে একটি দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন একটি আদালত। ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
তার গ্রেপ্তার দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন ঘোষণার এক সপ্তাহ পরই রায়টি দেয়া হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো একমাত্র বিকল্প হলো খালেদার দল।
এই দণ্ডাদেশের পর ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে।
বিএনপি ক্যাডার ও সমর্থকরা ঢাকার রাজপথে নেমেছেন। নেত্রীকে মুক্তি না দিলে ডিসেম্বরের নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়েছেন বিএনপির সমর্থকেরা। ২০১৪’র জানুয়ারিতে হওয়া সর্বশেষ নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো। তারা এমনও অভিযোগ করছেন যে, ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকার খালেদার বিরুদ্ধের বানোয়াট মামলা দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে।
এখন খালেদা জিয়ার দলের সামনে করণীয় আছে সামান্যই। ডিসেম্বরের নির্বাচনে যদি তারা অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে। শেখ হাসিনার জন্য টানা তৃতীয় মেয়াদের পথ সুগম হবে। অন্যদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে এমনটা যদি ধরে নেই, তাহলে খালেদার অনুপস্থিতি নির্বাচন জয়ে দলের সম্ভাবনার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমানকে পরবর্তী উত্তরাধিকার হিসেবে ধরে রেখেছেন। কিন্তু তিনি বর্তমানে গ্রেপ্তার এড়াতে নির্বাসনে রয়েছেন। তার মায়ের একই মামলায় আদালত তারেককেও গরহাজির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আধিপত্য। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে অখ্যাত কোন তৃতীয় দলের চ্যালেঞ্জ করাটা কার্যত অসম্ভব। খালেদার দ-কে কেন্দ্র করে যদি বিএনপির সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হয়, তাহলে বাংলাদেশ ডি-ফ্যাক্টো এক-দলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
তবে, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কুশাসনের কারণে বর্তমান এই ঘোলাটে পরিস্থিতির দায় বিএনপির ঘাড়েও আছে।
দুর্নীতিবিরোধী ওয়াচডগ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ২০০৫ সালে খালেদার শাসনামলে বাংলাদেশকে সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। (উল্লেখ্য, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৬ করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে অন্যতম দূর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।) দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পর হামলা চালাতে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উৎসাহিত করার অভিযোগও রয়েছে খালেদার বিরুদ্ধে।
তার ছেলে ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সিনিয়র দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও দুই ডজন মানুষ নিহত ও ৩ শতাধিক আহত হওয়া গ্রেনেড হামলার মামলাতেও তারা আসামী। ওই হামলায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা কোনমতে প্রাণে বেঁচে যান।
খালেদার শাসনামলের ইতি ঘটেছিল নাটকীয়ভাবে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে তার মেয়াদ শেষ হলে, নির্বাচন তদারকিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব কে দেবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে ব্যর্থ হয়। এ পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। তাদের সমর্থনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল দু’বছর, যাদের কিনা দায়িত্বে থাকার কথা মাত্র ৯০ দিনের জন্য। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল- হাসিনা নয়।
[কে.এস ভেঙ্কটাচালম একজন কলামিস্ট ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ওপরের লেখাটি দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত তার কলাম ‘ইজ দিস দ্য এন্ড অব দ্য টু পার্টি সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ এর অনুবাদ ]

No comments

Powered by Blogger.