শীতের থাবা

আবহাওয়ার চরমভাব থেকে নিস্তার পাচ্ছে না ধনী-দরিদ্র কোনো দেশ। ফলে শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা—কোনো মৌসুমেই প্রকৃতি ঠিক স্বাভাবিক আচরণ করছে না। গত কয়েক বছর স্বাভাবিক মাত্রার শীত না পড়লেও এবার বাংলাদেশে তাপমাত্রা এসে ঠেকেছে ২ দশমিক ৬-এ, যা অর্ধশত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশে কনকনে শীতের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতলতম বায়ুকে। ৪০-৫০ হাজার ফুট ওপরের জেট বায়ু নেমে এসেছে ৩০-৩৫ হাজার ফুটে। বর্তমানে উল্টো ঘূর্ণাবর্ত নামে শীতল বায়ুপ্রবাহ বইছে বলে আবহাওয়াবিদেরা মনে করেন। গতকাল তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও সামনে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা আছে। রেকর্ড ভাঙা শীতে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
ইতিমধ্যে শীতের প্রকোপে বেশ কয়েকজন মারা গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। শীতের কারণে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো এবারও শীতের প্রথম ধাক্কাটা এসে পড়েছে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের গায়ে। দেশে শীতের প্রকোপ কতটা ভয়াবহ, তার চেয়েও জরুরি প্রশ্ন হলো সেই শীত নিবারণের সুযোগ ও সামর্থ্য আমাদের আছে কি না। উন্নত দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নানা রকম আগাম পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর বাড়িঘর এতই নাজুক ও নড়বড়ে যে তা শীত ঠেকাতে পারে না। এ অবস্থায় শীতকাতর অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে প্রথমত প্রশাসন তথা সরকারকেই। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। দিনমজুর ও হতদরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে সবাই এগিয়ে এলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে না।

No comments

Powered by Blogger.