চার্টার্ড ক্রেডিটের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

চার হাজার গ্রাহকের প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত চার্টার্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ লিমিটেডের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে পুলিশি রিমান্ডে নেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের দুই সদস্যকে। ১২ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদের অন্য সদস্যরা এখন পলাতক। কারণ তারা সবাই অর্থ আত্মসাৎ মামলার আসামি। তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে। পুলিশ এবং সমবায় অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সমবায় অধিদফতরের থানা সমবায় কর্মকর্তা (রমনা-মতিঝিল) তাজুল ইসলাম জানান, চার্টার্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশ আগের। অধিদফতরের হস্তক্ষেপে এতদিন আমানতকারী বা গ্রাহকদের জমানো টাকা কিছু কিছু ফেরত দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে তারা একেবারেই টাকা ফেরত দিচ্ছে না। অনেককে টাকার বিপরীতে ব্যাংক চেক দেয়া হলেও সেসব চেক ডিজঅনার হয়। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি আমানতকারীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে সেই পরিমাণ সম্পদ ওই প্রতিষ্ঠানের নেই। তাই ধারণা করা হচ্ছে, পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা পারস্পরিক যোগসাজশে গ্রাহক বা আমানতকারীদের অর্থ পাচার করেছেন। সমবায় কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি আমানতকারী তানজিয়া খান, তানিম খান, তাহমিদা হোসেন, শাহানা হোসেন, ওমর আসাদ, রওশন আরা বেগম, আজিজুল হক এবং মাহমুদা খানম ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, তাদের আমানতের তিন কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না চার্টার্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ লিমিটেড। সরেজমিন ওই অফিসে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ২০ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সদস্য খান মো. ফিরোজ কবির (৬৫) এবং আজিজুর রহমানকে (৭৪) আটক করে মতিঝিল থানায় হস্তান্তর করা হয়। ওইদিনই আমি বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করি।’ তিনি জানান, দু’জনকে গ্রেফতারের পর অফিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করতে সমবায় অধিদফতরের পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও তিনি জানান। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রব্বানী যুগান্তরকে জানান, যাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠান মূলত মাইক্রো ক্রেডিটভিত্তিক। কিন্তু তারা নিয়ম-নীতি অমান্য করে আমানতকারীদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ সংগ্রহ করেছে। প্রথমদিকে লভ্যাংশ দিলেও পরে লভ্যাংশ দিতে গড়িমসি শুরু করে। তিনি জানান, পরিচালনা পরিষদের আরও যেসব সদস্যকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে তারা হল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম (৬৫), সহসভাপতি উম্মে হাবিবা (৫৫), সদস্য মিসেস শৈলী (৫৫), শামীমা বেগম (৫৫), রুমাইশা শবনম (৩৫), রুমাইশা মরিয়ম (৪০), সাবিরা বানু (৫০), এসএ মতিন (৮০), রবিউল ইসলাম (৬৫) এবং রেজওয়ানা কবীর (৩৫)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সফিকুল ইসলাম আকন্দ যুগান্তরকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রথমদিকে কৌশলে অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায়। এসআই জানান, বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেফতারের পর শুত্রবার আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। কিন্তু আদালত তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু এ ধরনের আসামিদের কাছ থেকে তথ্য বের করার জন্য একদিনের রিমান্ড যথেষ্ট নয়। তাই রোববার ফের আদালতে হাজির করে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয়। আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। মামলার এজাহারে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে চার্টার্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ লিমিটেড তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মামলায় আটজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ওই সাক্ষীরা ২০০৩ সালের আগস্ট থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে তিন কোটি টাকা ওই প্রতিষ্ঠানে জমা দেয়। এখনও তাদের ওই অর্থ ফেরত দেয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.