তৈরি পোশাকসহ নয় খাতে দক্ষ কর্মীর সংকট

দেশে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে পৌনে দু’লাখ দক্ষ শ্রমিকের সংকট রয়েছে পোশাক শিল্পে। নির্মাণ খাতে রয়েছে ২ লাখ অভিজ্ঞ কর্মীর অভাব। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাতেও নার্সিং ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান মিলে দক্ষ কর্মীর ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে পৌনে দু’লাখ। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) যৌথ সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্টটি হস্তান্তর করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক কেএস মুর্শেদী। ২৬৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে কৃষিজাত পণ্য খাতসহ নয়টি খাতের দক্ষ কর্মীর সংকটের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৮৮ হাজার, হালকা প্রকৌশল খাতে প্রায় ৩৬ শতাংশ দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। এছাড়া কৃষিজাত পণ্যে সার্বিকভাবে ৭৬ শতাংশ দক্ষ কর্মীর সংকট রয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি দক্ষ কর্মীর সংকট হচ্ছে ৭৭ শতাংশ, আধাদক্ষ ৭৫ শতাংশ এবং অদক্ষ ৭৫ শতাংশ। হসপিটালিটি ও পর্যটন খাতে আধাদক্ষ ৬২ হাজার, অদক্ষ ১ লাখ ২৬ হাজার এবং দক্ষ ৩৭ হাজার কর্মীর অভাব রয়েছে। আগামীতে তৈরি পোশাকসহ ৯টি খাতে কর্মী ও দক্ষ কর্মীর চাহিদা, বর্তমান অবস্থাসহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণার পর ‘স্কিল গ্যাপ এনালিসিস ইন ডিফরান্ট সেক্টর’ নামের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বাকি খাতগুলো হল- কৃষিজাত পণ্য, নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল, চামড়া ও জাহাজ শিল্প। ২০২০ সালে দেশের তৈরি পোশাকসহ ১০টি গুরুত্বপূর্ণ খাতে ৭ কোটি ৩০ লাখ কর্মীর প্রয়োজন হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ লাখ কর্মীর প্রয়োজন হবে পোশাক খাতে।
পাশাপাশি কৃষিজাত পণ্য খাতে কর্মীর প্রয়োজন হবে ২৯ লাখ। কিন্তু বর্তমানে এসব খাতে বড় ধরনের দক্ষ কর্মীর সংকট রয়েছে। সংকট মেটাতে ২০২১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। এটা করা গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হবে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে বিনিয়োগ নেই। এজন্য কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থানের পরিমাণ আরও বাড়বে। দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দক্ষ কর্মীর অভাব আগে থেকেই ছিল। প্রতিটি বাজেট বক্তব্যে আমি এ বিষয়টি আনার চেষ্টা করেছি। আজকের এই গবেষণা প্রতিবেদনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, কৃষিজাত পণ্যে উৎপাদনে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে। জাহাজ শিল্পে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার ৫ লাখ কর্মী প্রশিক্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। উন্নয়নশীল দেশের জন্য দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। কারণ যে পরিমাণ উন্নয়ন হচ্ছে এর জন্য দক্ষ শ্রমিক খুবই প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, শুধু বিদেশে দক্ষ শ্রমিক রফতানির জন্য নয়, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে এর প্রয়োজন রয়েছে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কেএস মুশের্দী অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ মন্ত্রণালয় ও বিআইডিএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ২৬৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে কৃষিজাত পণ্য খাতসহ নয়টি খাতের দক্ষ কর্মীর সংকটের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, কৃষিজাত পণ্যে সার্বিকভাবে ৭৬ শতাংশ দক্ষ কর্মীর সংকট রয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি দক্ষ কর্মীর সংকট হচ্ছে ৭৭ শতাংশ, আধা দক্ষ ৭৫ শতাংশ এবং অদক্ষ ৭৫ শতাংশ। নির্মাণ খাতে ২ লাখ অভিজ্ঞ কর্মীর সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে নার্সিং পেশায় ৯৬ হাজার এবং মেডিকেল টেকনিশিয়ান ৮২ হাজার কর্মী কম আছে। হসপিটালিটি ও পর্যটন খাতে আধা দক্ষ ৬২ হাজার, অদক্ষ ১ লাখ ২৬ হাজার এবং দক্ষ ৩৭ হাজার কর্মীর অভাব রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়, তৈরি পোশাক শিল্পে এ মুহূর্তে পৌনে ২ লাখ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৮৮ হাজার, হালকা প্রকৌশল খাতে প্রায় ৩৬ শতাংশ দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। বিআইডিএসের গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘আগামী ২০২০ সাল নাগাদ কৃষিজাত পণ্য খাতে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে ২৯ লাখ। একই সময়ে পোশাক শিল্পে প্রয়োজন হবে ৬০ লাখ। স্বাস্থ্য সেবা খাতে ১২ লাখ ৯০ হাজার, চামড়া খাতে ১৮ হাজার, আইটি খাতে ২০ হাজার, নির্মাণ খাতে ৪৪ লাখ, হালকা প্রকৌশল খাতে ৬৮ হাজার, জাহাজ শিল্প খাতে ৭ হাজার দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। এ সংকট পূরণে ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পে ১৫ লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাকি ৮টি খাতে আরও ৪০ লাখ কর্মীকে দক্ষ করে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা খাতে নার্সিং ও মেডিকেল টেকনিশিয়ানের প্রকৃত ঘাটতির ব্যাপারে নীতিগত স্বীকৃতি দিয়ে তা পূরণে দ্রুত গুণগত প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। একইভাবে কৃষিজাত পণ্য খাতে গুণগত মান নিশ্চিত করতে ফুড টেকনোলজিস্ট এবং ফুড প্রকৌশলী গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি পোশাক শিল্পে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন কর্মী গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.