‘একদিন সিইসি হবেন নারী’ by তামান্না মোমিন খান

নির্বাচন কমিশনে প্রথম নারী কমিশনার তিনি। কর্মজীবনে ছিলেন বিচারক। এখন জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার দায়িত্বে। সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম কুড়িয়েছেন বিচারক জীবনে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে তার মুখোমুখি হয়েছিল মানবজমিন। তিনি মনে করেন নারী এবং পুরুষকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। দেশের নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী কমিশনার। সামনে হয়তো এমন সময় আসবে এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন একজন নারী। তিনি মনে করেন, মেধার দিক দিয়ে নারী এবং পুরুষের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। তফাৎটা শুধু সুযোগের। সুযোগ পেলে নারীরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। যেক্ষেত্রে পুরুষ সফল হতে পারে নারীরাও সেখানে পিছিয়ে নেই। নিজেকে নারী হিসেবে নয় একজন মানুষ হিসেবে দেখেন তিনি। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সম্মোধনের প্রতি আপত্তি রয়েছে এই কমিশনারের। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে একজন পুরুষকে আমরা খুব সহজেই স্যার বলে সম্মোধন করি অথচ একজন নারীকে স্যার ডাকতে লজ্জাবোধ হয়।  পুরুষকে যদি স্যার ডাকা যায় কেন নারীকে স্যার ডাকা যাবে না। এ ক্ষেত্রে নারী কেন বৈষম্যের শিকার হবে। আমাদের ধারণা রয়েছে নারী মানেই পিছিয়ে থাকবে। এটা ভুল ধারণা। কারণ নারী বলে করুণা করে তাকে কোনো পদ দেয়া হয় না। যোগ্যতার বলে সে তা অর্জন করে। 
ছোটবেলা থেকে প্রশ্ন করতে ভালোবাসতেন কবিতা। তাই বড় ভাই তাকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বড় হয়ে তুই উকিল হবি। নিজের আগ্রহ থেকেই আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন বিচার বিভাগে।
কবিতা খানমের জন্ম ১৯৫৭ সালে নওগাঁও জেলায়। ৮ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। কবিতা খানম বলেন, অন্যান্য ভাইবোনের চেয়ে ছোটবেলায় আমি একটু বেশি দুরন্ত ছিলাম। সব কিছুতেই শুধু তর্ক করতাম। একারণে বড় ভাই আমাকে বলতো তুমি বড় হয়ে ওকালতি পড়বে। সেখান থেকেই আমার একটা সুপ্ত বাসনা জন্মায় ওকালতি পড়ার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করি। ল’ পড়ার কারণেই পরবর্তীতে আমি বিচার বিভাগে কাজ করতে পেরেছি। আমার লেখাপড়া বা কর্মক্ষেত্রে কখনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি আমার পরিবার। বিয়ের পর আমার স্বামী ও আমার শ্বশুরবাড়ির পরিবার আমাকে খুব সহায়তা করেছে। ১৯৮৪ সালে বিসিএস জুডিশিয়াল ক্যাডার হিসেবে রাজশাহীর মুন্সেফ কোর্টে যোগদান করেন কবিতা। একই বছরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। তার স্বামী মশিউর রহমান চৌধুরী রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। কবিতা খানম বলেন আমরা স্বামী-স্ত্রী ভালো বন্ধু ছিলাম। কর্মক্ষেত্রে আমাদের স্বামী-স্ত্রীকে সেরা জুটি আখ্যা দেয়া হয়েছিল। একারণে আমি সংসার এবং কর্মক্ষেত্র উভয় ক্ষেত্রেই সফলতার সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। সন্তানদের সঠিকভাবে লালন-পালন করতে পেরেছি। তার এক ছেলে সামরিক কর্মকর্তা চৌধুরী আবিদ রহমান এবং এক মেয়ে ডা. মুম্‌তাহ্‌িনা কুদসিয়াহ্‌ মিথিলা। কবিতা খানম বলেন মেয়েদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা কোনো অংশেই কম নেই।  মেয়েরা যদি বিয়ের আগে বাবার বাড়ি এবং পরে স্বামীর বাড়ির সহযোগিতা পায় তবে মেয়েরা কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকবে না। দীর্ঘ দিন বিচার বিভাগের কর্মক্ষেত্রে নারী হিসেবে কোনো বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে কখনো  বৈষম্যের শিকার হতে হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ চারজন পুরুষ আর একজন নারী কমিশনার যখন কমিশন বৈঠকে বসেন তখন আপনার মতামতের কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়  জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে নারী-পুরুষ আলাদা করে দেখা হয় না। সবার মতামতকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। কমিশনে নারী-পুরুষের কোনো বৈষম্য নেই। আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমি তা সততার সঙ্গে পালন করবো। বিগত কমিশন নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে তা থেকে নির্বাচন কমিশন মুক্ত করতে আপনারা কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন সব প্রতিষ্ঠানেই তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচন কমিশনেও আছে। আমরা যে দায়িত্ব নিয়েছি সে দায়িত্বের প্রতি সৎ থাকবো এবং সুষ্ঠু, নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবো এটাই আমাদের সদিচ্ছা। এই  মেসেজটাই আমরা সব জায়গায় দিয়ে আসছি এবং দিচ্ছি। সবখানেই নেগেটিভ পজেটিভ দুটি দিক আছে। আমরা পজেটিভ দিক থেকেই এগিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে। বিসিএস জুডিশিয়াল ক্যাডার হিসেবে ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী মুন্সেফ কোর্টে যোগদান করেন কবিতা। পদোন্নতি পেয়ে ১৯৯৪ সালে যুগ্ম জেলা জজ ও ২০০০ সালে অতিরিক্ত জেলা জজ হন তিনি। ২০০৬ সালে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান কবিতা। জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন তিনি। গত বছর জুন মাসে তিনি রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.