দিল্লির বাইরে যেতে পারবে এএপি?

ভারতের পাঞ্জাব ও গোয়া বিধানসভার ভোটের প্রাকমুহূর্তে প্রশ্ন একটাই, দিল্লির বাইরে শাখা বিস্তার করে আম আদমি পার্টি (এএপি) সরকার গড়তে পারবে কি না। এ দুই রাজ্যে আজ শনিবার এক দফার ভোট। পাঞ্জাবে অকালি দল ও বিজেপির টানা ১০ বছরের শাসনের অবসান এবং গোয়ায় বিজেপি ও কংগ্রেসের বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে এএপির উত্থান কতটা প্রবল হবে, আগ্রহ তা নিয়েই। টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকায় অকালি-বিজেপি জোটের জনপ্রিয়তা পাঞ্জাবে প্রায় তলানিতে। রাজ্যের অর্থনীতির হাল যত খারাপ হয়েছে, কর্মসংস্থান যত সংকুচিত হয়েছে, ততই বেড়ে গেছে হতাশা।
সেই সুযোগে জাঁকিয়ে বসেছে মাদকের কারবার। এবারের ভোটে সব দলই মাদকের সমস্যা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গোয়ার নির্বাচনে বিরোধী কংগ্রেস ও এএপির প্রধান প্রতিশ্রুতি, দুর্নীতি দূর করে রাজ্যের সুনাম ফিরিয়ে দেওয়া। গোয়ায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিকরকে কেন্দ্রে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করে দিল্লিতে টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়া লক্ষ্মীকান্ত পারসেকর দুর্নীতি বন্ধ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। ছোট্ট এই রাজ্যের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন ও খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। অতি পর্যটনের কারণে নানান সামাজিক ব্যাধি যেমন গোটা রাজ্যে ছেয়ে গেছে, তেমনি সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশগত সংকট। আর এখান থেকেই শাসকদলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। পাশাপাশি নতুন আশা জাগিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। ফলে ১১৭ আসনের পাঞ্জাব ও ৪০ আসনের গোয়ায় এবারের ভোট হয়ে দাঁড়িয়েছে আক্ষরিক অর্থেই ত্রিমুখী। যেহেতু দুই রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি ও তার জোট সঙ্গী অকালি দল এবং আলোচিত বিতর্কিত নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর এ দুই রাজ্যে প্রথম ভোট, সেহেতু বিজেপির কাছে এই ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাঞ্জাবে শাসনের জোট সঙ্গী অকালি দল এতটাই কোণঠাসা, জয়ের মাধ্যমে সম্মান ধরে রাখার আশা বিজেপি প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। অকালি দলের যে প্রভাব ছিল রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে, সেখানে বড় থাবা বসিয়েছে এএপি। অন্যদিকে রাজ্যের শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ঐতিহ্যগত সমর্থনে বাড়তি আশা জেগেছে। কংগ্রেসের চিন্তা মূলত আম আদমি পার্টির হঠাৎ উত্থান নিয়ে।
পাঞ্জাবি সমাজে সেই অর্থে ধর্মীয় মেরুকরণ না থাকলেও ঐতিহ্যগতভাবে শিখ সম্প্রদায় সমর্থন করে এসেছে অকালি দলকে, হিন্দুরা কংগ্রেসকে। আবার দলিত শিখদের মধ্যে কংগ্রেসকে সমর্থনের প্রবণতা সেখানে আছে। এই সমর্থনের ওপর ভর দিয়েই কংগ্রেস এবার পাঞ্জাব দখলে মরিয়া। কিন্তু এএপির উপস্থিতি লড়াইকেই ত্রিমুখী করে দিয়েছে। এতটাই যে রাজ্যে ‘ত্রিশঙ্কু’, অর্থাৎ কিনা ঝুলন্ত বিধানসভার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ত্রিশঙ্কু বিধানসভার প্রবল আশঙ্কা গোয়ায়ও। সেখানে এএপির ভরসা সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে নামা এলভিস গোমস। দলটি ক্ষমতায় এলে গোমসই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যবাসীকে তিনি তিনটি জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। চুরি ও চোরাচালান বন্ধ, সবার জন্য কর্মসংস্থান এবং মাদকের অভিশাপ দূর করা। রাজ্যের সব দলের নেতারাই কবুল করছেন, এমন ক্ষুরধার লড়াই গোয়ার ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.