সাদ্দাম থাকলেই ভালো হতো

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেই মনে করেন, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলা চালানো উচিত হয়নি। দীর্ঘ ইরাক যুদ্ধের পরিণামেই মধ্যপ্রাচ্যের নানা বিশৃঙ্খলা এখনো মানুষকে ভোগাচ্ছে—এ উপলব্ধি থেকেই দুই নেতার এ ধারণা। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা জন নিক্সন তাঁর লেখা নতুন বইয়ে লিখেছেন, ইরাক শাসনের জন্য দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে বাঁচিয়ে রাখাই উচিত ছিল। ইরাকি স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন জন নিক্সন। তাঁর নতুন বই চলতি মাসেই প্রকাশিত হবে। বইটির অংশবিশেষ টাইম সাময়িকীর অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি সাদ্দামকে উৎখাতের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। জেরার সময় সাদ্দাম বলেছিলেন, ইরাক দখল করা সহজ হবে না। তবে ওয়াশিংটনের নব্য রক্ষণশীলেরা তখন সেটা সম্ভব বলেই ভেবেছিলেন।
নিক্সনের ভাষ্য: জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম বলেছিলেন, ‘তোমরা ব্যর্থ হতে চলেছ। বুঝতে পারবে, ইরাক শাসন করা এত সোজা না। কারণ, তোমরা ভাষাটা জানো না। ইতিহাস জানো না। আর তোমরা আরব মনন-মানসও বোঝো না।’ নিক্সন বইটিতে স্বীকার করেছেন, সাদ্দামের ওই কথা যুক্তিসংগত ছিল। আর ইরাকের মতো বহু জাতিগোষ্ঠীর রাষ্ট্র চালাতে তাঁর মতো কঠোর শক্তিশালী শাসকই দরকার। সুন্নি চরমপন্থা এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরাকি ক্ষমতাকাঠামো—দুটোই ছিল সাদ্দামের শত্রু। আর তাদের দমিয়ে রেখেই ইরাক শাসন করতেন তিনি। নিক্সন লিখেছেন, সাদ্দামের নেতৃত্বের ধরন এবং নির্মমতা ছিল তাঁর সরকারের অনেক ত্রুটির একটি। কিন্তু তিনি নিজের ক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ধরনের হুমকি এলে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। সে কারণেই গণবিক্ষোভ বা আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁর সরকারের পতন ঘটানো সুদূর পরাহত ছিল। অনুরূপভাবে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো কোনো জঙ্গি সংগঠনের পক্ষে তাঁর শাসনামলে এতটা প্রভাব বিস্তার করার সম্ভাবনাও ছিল না। জন নিক্সনের ভাষায়, ‘সাদ্দামকে আমার মোটেও ভালো লাগেনি। তবে তাঁর প্রতি একপর্যায়ে আমার একধরনের তিক্ত সম্মানবোধও জন্ম নেয়। কারণ তিনি ইরাকি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পেরেছিলেন। সাদ্দাম আমাকে একবার বলেন, “আমার আগে ইরাকে কেবলই বাগ্বিতণ্ডা ও ঝগড়া চলত। আমি এসবের অবসান ঘটিয়ে সবাইকে একমত করাতে পেরেছি”।’

No comments

Powered by Blogger.