ট্রাম্পই আমেরিকার অবতার নন by মিজানুর রহমান খান

মার্কিন সংবিধানে লেখা আছে, প্রেসিডেন্টের হাতে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে। বাংলাদেশের সংবিধানে এই ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর। একজন ব্যক্তির হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক। কারণ, ক্ষমতার প্রয়োগ ও অনুশীলনে পদে পদে যেভাবে ভারসাম্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা চলে না। বাংলাদেশে তা সংবিধানগত ও বাস্তব উভয় অর্থে অনুপস্থিত।
রাষ্ট্রের কোনো একটি অঙ্গকে অসীম ক্ষমতা দেয়নি মার্কিন সংবিধান। বরং প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতা হলো কংগ্রেসের কাছে। সংসদে নীতি তৈরি হবে। বাজেটের পরিমাণ নির্দিষ্ট হবে। তারাই জনগণের কণ্ঠস্বর, ঐতিহাসিক সাধারণ ধারা হলো হোয়াইট হাউস কংগ্রেসকে নয়, কংগ্রেসই হোয়াইট হাউসকে চালিত করেছে। ৭ নভেম্বর দ্য গার্ডিয়ানে টম ম্যাকার্থি ঠিকই লিখেছেন, ‘সিনেট, কংগ্রেসসহ সবটাই ট্রাম্পের দলের কিন্তু তাই বলে ট্রাম্পের জন্য তা খেয়াল–খুশিমতো হবে না।’ কংগ্রেসের স্পিকার পল রায়ান যদিও ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে প্রথম কাতারে ছিলেন কিন্তু তিনি ট্রাম্পের সমালোচকদের অন্যতম, এমনকি তাঁর সঙ্গে প্রচারণায় যেতে রাজি ছিলেন না। দেখার বিষয়, স্পিকার পদে তাঁর পুনর্নির্বাচনে ট্রাম্প কী ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশের গণমাধ্যম অবচেতনে ট্রাম্পের জয়-পরাজয়ের মধ্যেই নিরঙ্কুশভাবে যে আশা-নিরাশা দেখছে, সেটা মার্কিনীয় নয়, তাদের দুর্বলতা। তারা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে যা দেখে, সেভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেও দেখছে। ট্রাম্পের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হওয়া মাইক পেন্স শ্রদ্ধাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত।
ট্রাম্পের মুসলিম বহিষ্কারের ঘোষণাকে পেন্স বলেছেন ‘আক্রমণাত্মক ও অসাংবিধানিক’। ইরাকে নিহত এক মুসলিম মার্কিন সেনার পরিবারের সঙ্গে ট্রাম্প দ্বন্দ্বে জড়ালে পেন্স বিবৃতি দেন: ‘প্রত্যেক মার্কিন ওই পরিবারকে হৃদয়ে ধারণ করবে।’ বাংলাদেশকে শিখতে হবে যে কী করে কোনো স্পর্শকাতর নীতিগত প্রশ্নে দলের অভ্যন্তরে ভিন্নমত প্রকাশ করা যায়, কিন্তু তাকে কেউ ষড়যন্ত্র দূরে থাক, অস্বাভাবিক বিষয় হিসেবে দেখে না। নির্বাচনী প্রচারকালে ট্রাম্প যখন ভ্লাদিমির পুতিনের সিরীয় নীতির প্রশংসা করেছেন, তখন পেন্স ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে আসাদের নিন্দা করে রাশিয়াকে আক্রমণ করেছেন। সুতরাং, অভ্যন্তরীণভাবে পেন্সকে একটা রক্ষাকবচ হিসেবে দেখা যেতে পারে। মন্ত্রিসভাও তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ হবে না। জাতির ‘কল্যাণ সাধনের’ জন্য ট্রাম্প যা–ই করার চেষ্টা করুক না কেন, তা যদি গণতন্ত্রের সঙ্গে না যায়, তা যে তিনি করতে পারবেন না, সেটা ট্রাম্পের অতি বড় সমর্থকেরাও জানেন। তবে সত্য যে, ক্ষমতার পৃথক্করণ কিছু ক্ষেত্রে কাগুজে বিষয়। যেমন কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ওবামা লাখ লাখ বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীকে তিন বছরের জন্য থাকতে দিয়েছেন। ট্রাম্প এখন বললেন, ৩০ লাখকে যেতে হবে। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ওবামা গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেছেন। ওবামা এখন স্বীকার করছেন যে ওটা ছিল তাঁর নিকৃষ্টতম ভুল। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ওবামা স্বীকার করেছিলেন যে রাষ্ট্রের ওপর হামলা অত্যাসন্ন না হলে যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই। সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওবামা সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে সৈন্য প্রেরণ করেছেন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই। এর আগে মার্কিন ফৌজদারি আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও বুশ প্রশাসন রিমান্ডে নির্যাতন করেছে ও বিনা পরোয়ানায় নাগরিকদের ফোনে আড়ি পেতেছে। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জিম ফিনারের মতে, ‘সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্টরা কংগ্রেসকে অগ্রাহ্য করে “ইউনিটারি-এক্সিকিউটিভ” (বাংলাদেশি মডেল স্মরণযোগ্য) তত্ত্ব প্রয়োগ করছেন। এই তত্ত্বের উৎস হলো প্রাচীনকালের রাজার ক্ষমতা।’ আশঙ্কা হচ্ছে,
ট্রাম্প সেই ‘সাহসী’ রাজা হওয়ার প্রবণতা দেখাবেন কি দেখাবেন না। ট্রাম্প কী কী বলেছিলেন, তার চেয়ে তিনি কী কী করে দেখাবেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মনে হচ্ছে, গর্তে পড়লে তা থেকে উঠে দাঁড়ানোর মূল রক্ষাকবচ বাক্স্বাধীনতা, মার্কিন সংবিধান বা তাদের সরকার–ব্যবস্থা নয়। বাক্স্বাধীনতা আছে বলেই ট্রাম্পের পক্ষে একজন সাদ্দাম বা গাদ্দাফি ধরনের লৌহমানব হওয়া সম্ভব নয়। এমনকি মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ বা সিঙ্গাপুরের লি কুয়েনের মতো উন্নয়ন প্রদানকারী একজন কর্তৃত্ববাদী নায়ক হওয়াও কঠিন। যদিও মূলধারার মার্কিন গণমাধ্যমের ভবিষ্যদ্বাণী পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের স্বাধীনতার শক্তি ট্রাম্প অগ্রাহ্য করে চলতে পারবেন না। ট্রাম্প জানবেন যে তিনি আমেরিকার টেকনিক্যাল প্রেসিডেন্ট। তবে মার্কিন সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার এতটা কঠোর ও স্পষ্ট পৃথক্করণ থাকার পরও একজন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার ওপর কিছু বিষয় নিশ্চয় নির্ভর করবে। মনে হয় চেনা ট্রাম্পের হঠাৎ অচেনা হয়ে যাওয়াটায় গণমাধ্যমের চাপের ছাপ পরিষ্কার। এর আগে গণমাধ্যমকে শায়েস্তা করার হুমকি ট্রাম্প দিয়েছিলেন। পাঁচ মাস আগেই বলেছেন, তিনি মানহানির আইন ‘শিথিল’ করবেন, যাতে মিডিয়াকে ধরা সহজ হয়। তাঁর সমালোচক ও বিক্ষোভকারীদের প্রতি রূঢ় হওয়ার মনোভাবও তিনি লুকিয়ে রাখেননি। তবে নিজেকে রক্ষায় কালাকানুন আরোপ করা, মানহানিকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে সমালোচকদের স্তব্ধ করতে গিয়ে তিনি নিজের হাত পোড়াবেন কি না, দেখার বিষয়। নির্বাচনের পর গোটা আমেরিকা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। শয়ে শয়ে স্কুলছাত্রও রাজপথে এসেছে।
কিন্তু ট্রাম্প তাঁর প্রথম নির্বোচনোত্তর ভাষণের মতোই উদার থাকবেন, সেটা আমরা দেখতে চাইব। আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরদিন ১০ লাখ নারীর রাজধানীতে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনার খবর দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে ইংল্যান্ডের ও মার্কিন নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছিলেন। ইংল্যান্ড ৩৭ বছর আগেই মার্গারেট থ্যাচারকে প্রধানমন্ত্রী করতে পারল। বার্নি স্যান্ডার্স বা অন্য কোনো পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে ট্রাম্প এ ধরনের অভাবনীয় উগ্র নির্বাচনী কৌশল নিতেন কি না সন্দেহ। নারী সম্পর্কে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের আবির্ভাব-পূর্ব আরব সমাজের অন্ধকার যুগকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। কেউ অবশ্য অবাক না হয়ে বলেন, এটা আমেরিকার পুঁজিবাদের অনুষঙ্গ। তবু গত ৯ অক্টোবর বোমার মতো ফাটল ট্রাম্পের অশালীন টেপ। ওই রাতেই দুজন মার্কিন অধ্যাপকের সঙ্গে ই-মেইল বার্তা চালাচালি করি। নারী অধ্যাপক অ্যালিস ইগলি বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনার মৃত্যু হলো। নারী সম্পর্কে তাঁর মনোভাব পঞ্চাশের দশকের, কিন্তু জবরদস্তি যৌনতা আমেরিকার ইতিহাসে কখনো গ্রহণযোগ্য ছিল না।’ দুজন অধ্যাপকই ঘোরতরভাবে ট্রাম্পবিরোধী। অথচ তাঁরা ট্রাম্পের ওই মানহানিকর উক্তিকে শাস্তিযোগ্য বলে মানতে চাননি। এটা তাঁর বাক্স্বাধীনতার অংশ। নারীর প্রতি তাঁর উক্তিগুলো কি অভিশংসনযোগ্য অপরাধের পর্যায়ে পড়ে? আমার প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক অ্যালিসের মন্তব্য ছিল: প্রেসিডেন্ট পদে থেকে যদি তিনি জবরদস্তি যৌনকর্মে (ধর্ষণে) লিপ্ত হতেন, তাহলে তা ইমপিচেবল অফেন্স হতো। শুধু মন্তব্য শাস্তিযোগ্য নয়। তিনি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের ‘অফেনসিভ স্পিচ’-বিষয়ক রায়ের প্রতি আমার নজর কাড়লেন। এসব রায়ের সারকথা হলো, কোনো মন্তব্যের কারণে বিপদের সৃষ্টির আশঙ্কা হতে হবে বাস্তব, অত্যাসন্ন। ‘ইমিডিয়েট ডেঞ্জার’ থাকতে হবে। ওই সব রায়ের সারকথা হলো, মানহানি বা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কোনো উসকানি ধরনের কোনো মন্তব্য শাস্তিযোগ্য নয়, যদি না তা ল অ্যান্ড অর্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে বিপন্ন বা সংকটাপন্ন করে তোলে। শুধু কল্পনাশক্তির ওপর নির্ভর করে কোনো অপরাধ সংঘিটত হয় না। অ্যালিস বললেন, ‘আমরা তাঁর সমালোচনা করছি। কিন্তু কেউ এ জন্য তাঁর শাস্তির দাবি করিনি।’ একই মত দিলেন অধ্যাপক ড্যান পি ম্যাক অ্যাডামস। অ্যাডামস অবশ্য বললেন, ইমপিচেবল অফেন্স কী, সেটা কংগ্রেসই ঠিক করে থাকে। কংগ্রেস অভিশংসনের নালিশ আনে। বিচার করে সিনেট। কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণে দরকার ২১৮ আসন, রিপাবলিকানদের আছে ২৩৮টি। ডেমোক্র্যাটরা ১৯৩। সিনেটে অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র। ৫১ জন রিপাবলিকান। আর ডেমোক্র্যাটরা ৪৮ জন। ট্রাম্প মনোনীত বিচারপতিরা হয়তো উতরে যাবেন সুপ্রিম কোর্টে। তাই সবই তো ট্রাম্পের! প্রেসিডেন্টের পদসহ কংগ্রেস ও সিনেট একটি দলের দখলে যে যেতে পারে, সেটা মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা কল্পনা করেছিলেন। সেটা ভেবে তাঁরা রক্ষাকবচ তৈরি করেছিলেন। নিউজউইক–এ একজন কট্টর রিপাবলিকান সমর্থক, যিনি লিখেছেন, ক্ষমতার ভারসাম্যই ট্রাম্পকে রুখে দেবে। অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর কোনো মানে নেই।
এই ভদ্রলোক ট্রাম্প বা হিলারি কাউকে ভোট দেননি বলে জানিয়েছেন। অবশ্য আমি বিশ্বাস করি, মার্কিন নির্বাচন ও শাসনব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন আনা দরকার। ট্রাম্প অন্তত তৃতীয় বিশ্বের স্বৈরশাসক হতে পারবেন না। কারণ, মার্কিন সাংবিধানিক ব্যবস্থা এমন করেই সাজানো, যাতে কোনো ব্যক্তিরই রাজার হালে দেশ চালানোর সুযোগ নেই। আমরা মনে রাখব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের দল নিরোধকের মতো কোনো ৭০ অনুচ্ছেদ নেই। ট্রাম্পের দলের লোকেরা ইস্যুভিত্তিক বিদ্রোহ করবেন, কিন্তু তা বিশৃঙ্খলা বলে গণ্য হবে না। ভিন্নমতের জন্য ট্রাম্প তাঁদের কারাগারে নিক্ষেপ করবেন কি না, সেটা দেখার বিষয়। তবে মার্কিন ব্যবস্থা কাউকেই নিরঙ্কুশ অবতার হতে দেয় না। জন ম্যাককেইন একজন প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প-ম্যাককেইনের বাদানুবাদে মনে হচ্ছিল, তাঁরা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। ম্যাককেইন এর আগে রিপাবলিকান মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন, ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার পর তিনি দুই ছত্রে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ট্রাম্পকে যাঁরা ভেতর থেকে আটকাবেন, সিনেটে আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান ম্যাককেইন হবেন তাঁদের অন্যতম। ইলিনয়ের নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক মনস্তত্ত্ব বিভাগের। আমাকে লেখা ই-মেইলে অধ্যাপক অ্যাডামস জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে এটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয় যে মি. ট্রাম্প নিজেকে শুধরে চলতে পারবেন। অধ্যাপক অ্যাডামসের সতর্ক মন্তব্য আমরা মনে রাখব: ‘আমি সন্দেহ করি যে মি. ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে ইমপিচমেন্ট প্রসিডিংস পথের ধারে কোথাও তাঁর জন্য ওত পেতে থাকতে পারে। তিনি এতটাই বিস্ফোরক ও দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত একজন মানুষ যে তাঁর পক্ষে কংগ্রেস, এমনকি নিজের দলের সাংসদদের সঙ্গে বিরাট কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।’
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷
mrkhanbd@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.