মিত্রদের ওবামার আশ্বাস

সংবাদ সম্মেলনে বারাক ওবামা
সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে ইউরোপীয় মিত্রদের আশ্বস্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সময় করা বিতর্কিত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। কঠোর বাস্তবতার মুখে তিনি সেই অবস্থান থেকে পিছু হটবেন। তবে ওবামা স্বীকার করেছেন, নিজের উত্তরসূরিকে নিয়ে তিনি ‘উদ্বিগ্ন’। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ বিদেশ সফরের আগে গত সোমবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ওবামা। সেখানেই তিনি ট্রাম্পকে নিয়ে ইউরোপসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত জয়ের পর ইউরোপীয় নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্যই মূলত এর কারণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে এটিই ছিল বারাক ওবামার প্রথম সংবাদ সম্মেলন। এরপর শেষ বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে গ্রিসে যাত্রা করেন ওবামা। সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, নির্বাচনের প্রচারণায় হাততালি পাওয়া বাগাড়ম্বর করা যতটা সহজ, লাখ লাখ অভিবাসীকে দেশছাড়া করা, ন্যাটো ও জাপানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি বাতিল করা, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি উড়িয়ে দেওয়া অথবা পরিবেশ রক্ষাসংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করা তত সহজ নয়। তিনি বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) যে অভিজ্ঞতা কিংবা ধারণা নিয়েই প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আসেন না কেন, এই পদ তাঁকে জাগিয়ে দেবে।’ ওবামা বলেন, ট্রাম্প যতটা না ভাববাদী, তার চেয়ে বেশি বাস্তববাদী। বাস্তবতার একধরনের চাপ রয়েছে, যা অনেক কিছু ঠিক করে দেয়। জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ট্রাম্প শ্রদ্ধা দেখাবেন বলেও মিত্রদের আশ্বস্ত করেছেন ওবামা। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পকে মাঝেমধ্যেই মেজাজ গরম করতে দেখা গেছে। ট্রাম্পের স্বভাবের এ বৈশিষ্ট্য নিয়েও কথা বলেন ওবামা। বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় অবশ্যই মেজাজকে একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। না হলে তা ক্ষতিকর হবে। মার্কিন নির্বাচনের এবারের অতিতিক্ত প্রচারণায় বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ‘আমি তাঁকে (ট্রাম্পকে) বলেছি এবং জনসমক্ষেও বলেছি, ঐক্যের একটা বার্তা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রচারণার সময় সংখ্যালঘু, নারী ও অন্য যারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছেন তাঁদের কাছে এই বার্তা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।’ ওবামা আরও বলেন, গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করার পর তিনি নিশ্চিত যে, তাঁর উত্তরসূরি সব মার্কিনেরই প্রেসিডেন্ট হতে চান। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প খুব ‘আন্তরিক’।
ট্রাম্প আরও আশ্বস্ত করেছেন, কৌশলগত সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও তাঁর আগ্রহ রয়েছে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার ওবামা গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে পৌঁছেছেন। এই সফরে পেরু ও জার্মানিতেও যাবেন তিনি। ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ: এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত সোমবার ওই ফোনালাপে ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে একমত হন এই দুই নেতা। ক্রেমলিন বলছে, দুই নেতা ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফল হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পুতিন। ফোনালাপে ট্রাম্প বলেন, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক চান। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শুরু থেকেই পুতিনের প্রশংসা করে আসছেন ট্রাম্প। বলেছেন, তাঁর দৃষ্টিতে ওবামার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য নেতা পুতিন। মার্কিন নির্বাচনের সময় রুশ ক্ষমতাসীনদের মদদে প্রচারণাকাজের ওপর হ্যাকিংয়ের অভিযোগ ওঠে। এমন প্রেক্ষাপটে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ‘সৌহার্দ্য’ যুক্তরাষ্ট্রে সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.