রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন নিয়ে কফি আনানের ‘গভীর উদ্বেগ’

কফি আনান
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিহত হওয়া এবং সেখানে চলমান অন্যান্য সহিংসতার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। সেখানে সপ্তাহান্তে সেনাবাহিনীর হাতে অনেক লোক নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা মুসলিম। সেখানে চলমান দমনাভিযানে আতঙ্কিত হয়ে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মিয়ানমারের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কফি আনানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিশন রাখাইন রাজ্যে গেছে। ওই রাজ্যের রাজধানী সিত্তিতে সাবেক এই মহাসচিব স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এরপর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে কফি আনান এই রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানান। সাম্প্রতিক সহিংসতায় আক্রান্ত গ্রামগুলোতে গতকাল বুধবার কফি আনানের যাওয়ার কথা। মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে কফি আনান বলেন, সহিংসতায় রাখাইন রাজ্যে পুনরায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, ‘সব সম্প্রদায়েরই উচিত সহিংসতা পরিত্যাগ করা। এবং আমি নিরাপত্তা বিভাগকে আইনের শাসনের প্রতি আনুগত্যশীল থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করব।’ গত মাসে মিয়ানমারের পুলিশ ফাঁড়িতে প্রাণঘাতী হামলার পর সীমান্তের কাছে থাকা নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সেনাবাহিনী অবরোধ করে রেখেছে। সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে, বিদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রোহিঙ্গা মুসলিমরা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার সঙ্গে জড়িত। তারা ওই সব হামলাকারীকে খুঁজছে এবং ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর হাতে প্রায় ৭০ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা (অ্যাকটিভিস্ট) বলছেন,
সংখ্যাটি হবে এর চেয়ে ঢের বেশি। তাঁরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা, নারীদের ধর্ষণ ও তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অ্যাকটিভিস্টদের এই দাবির পক্ষে কোনো স্বাধীন পর্যবেক্ষককে তদন্ত করতেও দিচ্ছেও না। এদিকে ওয়াশিংটনে বসে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র এলিজাবেথ ট্রুডো বলেন, রাখাইনে সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বিগ্ন। এ ঘটনায় ‘স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত’ করার অনুমতি দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। কয়েক দিন পরিস্থিতি শান্ত থাকার পর সপ্তাহান্তে দুই দিনের লড়াইয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে ৩০ জনের বেশি নিহত হয়। জানা গেছে, দেশটির সেনাবাহিনী এবারই প্রথম হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করেছে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, সহিংসতার কারণে তাঁদের প্রায় ২০০ লোক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের ফেরত পাঠানোয় তারা সেখানে আটকা পড়েছে। অক্টোবরের শুরুতে সহিংসতা শুরুর পর গত সোমবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয় বলেও তাঁরা জানান। রাখাইন প্রসঙ্গে মানবিক বিষয় সমন্বয়ের জাতিসংঘ অফিস বলছে, দেড় লাখ লোক থাকার অত্যন্ত দরিদ্র এই এলাকায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো ধরনের মানবিক সাহায্য গিয়ে পৌঁছায়নি এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় সেখানের প্রায় ১৫ হাজার লোক বাস্তুহারা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.