আগাম ভোটে এগিয়ে হিলারি, জনমতে পিছিয়ে ট্রাম্প

হিলারি, ট্রাম্প
নির্বাচনের বাকি মাত্র ১৩ দিন। ঠিক এই সময় একাধিক জনমত জরিপ থেকে সুখবর পেলেন প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। গত সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ সিএনএন/ওআরসির জনমত জরিপে জাতীয় পর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় হিলারি ৫ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। গণনা না হলেও আগাম ভোটে হিলারি এগিয়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুটা হাত কচলে স্বীকার করেছেন জনমত জরিপে তিনি পিছিয়ে আছেন। তবে সে জন্য সব দোষ তথ্যমাধ্যমের। তারা সত্যি কথা বলছে না, তাঁকে হারাতে হিলারির পক্ষে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ট্রাম্প এই অভিযোগও করেছেন, যেসব জনমত জরিপে তিনি এগিয়ে, তথ্যমাধ্যম সে ব্যাপারে মনোযোগ দিচ্ছে না। গত সোমবার ফ্লোরিডায় এক খামারে তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি দাবি করেন, পত্রপত্রিকায় তাঁর পিছিয়ে পড়ার কথা বলা হলেও আসলে তিনি এগিয়ে আছেন। নতুন যেসব জনমত জরিপ প্রকাশিত হয়েছে তাতে ট্রাম্প পিছিয়ে থাকলেও নিজের একনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যে তাঁর সমর্থন মোটেই কমেনি। গত এক মাসে গৃহীত অধিকাংশ জরিপের গড় হিসাবে হিলারি ট্রাম্পের তুলনায় ৪-৫ পয়েন্টে এগিয়ে থেকেছেন। ট্রাম্পের নারীঘটিত নানা কেলেঙ্কারির পরেও তাঁদের দুজনের ব্যবধান এখনো প্রায় সেই পরিমাণ রয়েছে। বস্তুত স্বল্পশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি আস্থা ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে কলেজশিক্ষিত এমন শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ট্রাম্পের তুলনায় হিলারি ক্লিনটনের সমর্থন ১১ পয়েন্ট বেশি। ট্রাম্প সবচেয়ে পিছিয়ে নারী ও অশ্বেতকায় ভোটারদের মধ্যে, যাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ হিলারিকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকস, যারা একাধিক জাতীয় জরিপের গড় হিসাব করে থাকে, তারা জানিয়েছে ট্রাম্পের তুলনায় হিলারি সাড়ে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে। এসব জরিপের ভিত্তিতে বিখ্যাত নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ নেট সিলভার জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে হিলারির জয়ের সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ। আর হিলারি যে এগিয়ে থাকছেন, তার আরেক প্রমাণ মিলেছে আর্লি ভোটিং বা আগাম ভোটের হিসাব থেকে। ৮ নভেম্বর ভোটের তারিখ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যেই আগাম ভোট দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। এমএসএনবিসি জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৬৫ লাখ মানুষ তাঁদের ভোট দিয়ে ফেলেছেন। এঁরা কাকে ভোট দিয়েছেন, তা জানা না গেলেও কোন দলের সমর্থকেরা এই ভোট দিয়েছেন, তার হিসাব রয়েছে। প্রধান দুই দল আগাম ব্যালট সংগ্রহের যে হিসাব দিয়েছে, তা সত্যি হলে ইতিমধ্যে রিপাবলিকানদের তুলনায় ডেমোক্রেটিক ভোটাররা আগাম ভোটদানে অংশ নিয়েছেন প্রায় দ্বিগুণ হারে। আইওয়া, ফ্লোরিডা ও ওহাইও ছাড়া ‘ব্যাটেলউন্ড স্টেট’ হিসেবে পরিচিত আটটি অঙ্গরাজ্যেই ভোট গ্রহণের এই চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এসব অঙ্গরাজ্যে পুরুষদের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি সংখ্যায় ভোট দিচ্ছেন। জনমত জরিপ অনুসারে এসব অঙ্গরাজ্যে নারীদের মধ্যে ট্রাম্পের তুলনায় হিলারির সমর্থন প্রায় ১৯ পয়েন্ট বেশি। হিলারির জন্য আরও বড় সুখবর এসেছে ইলেকটোরাল ভোটের হিসাবে। ওয়াশিংটন পোস্ট বিভিন্ন জরিপের ভিত্তিতে যে ইলেকটোরাল মানচিত্র তৈরি করেছে, তাতে এই মুহূর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে হিলারি ও ট্রাম্প পাবেন যথাক্রমে ৩২৩ ও ১৮০ ইলেকটোরাল ভোট। নির্বাচনে জিততে হলে দরকার কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর হিসাব অনুসারে, রিপাবলিকানদের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত একাধিক অঙ্গরাজ্য এই মুহূর্তে হিলারির দিকে ঝুঁকছে। এমনকি ‘গভীর রকম লাল’ (অর্থাৎ রিপাবলিকানদের কট্টর সমর্থক) হিসেবে বিবেচিত টেক্সাস ও ইউটা পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। সেই কারণে শুধু হোয়াইট হাউস নয়, তারা কংগ্রেসের উভয় কক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এ কাজে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে নির্বাচনী অভিযানে জামার হাতা গুটিয়ে প্রচারে নেমেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। তাঁরা দুজনেই ডেমোক্রেটিক সমর্থকদের আগাম ভোটব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণের জন্য জোর প্রচার চালাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার লক্ষ্য অবশ্য আরও সুদূরপ্রসারী। গত সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে মোটা অঙ্কের চাঁদাদাতাদের এক সভায় তিনি বলেন, হিলারি নয়, যাতে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণ অর্জিত হয়, সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শুধু জিতলেই চলবে না, বড় ব্যবধানে জিততে হবে। সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে আমেরিকা সম্বন্ধে ট্রাম্পের যে দৃষ্টিভঙ্গি, আমরা তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করি।’ নিজের দুই দফা শাসনের অধিকাংশ সময় ওবামাকে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। সে কারণে নিজের পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। হিলারি যাতে সেই একই সংকটে না পড়েন, সে জন্য তিনি শুধু সিনেট নয়, প্রতিনিধি পরিষদও ছিনিয়ে আনার কাজে উঠেপড়ে লেগেছেন।

No comments

Powered by Blogger.