জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত কোয়েটা, নিহত ৬১

আড়াই মাসের মাথায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় আবার রক্তাক্ত হলো পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা। গত সোমবার রাতে সেখানকার একটি পুলিশ একাডেমিতে আত্মঘাতী বোমা হামলা ও গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬১ জন। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও পাকিস্তান তালেবান। এর আগে গত ৮ আগস্ট কোয়েটার একটি সরকারি হাসপাতালে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ৭০ জন। নিহত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশই ছিলেন আইনজীবী ও সংবাদকর্মী। এবার জঙ্গি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো পুলিশ। সোমবার রাতের এই হামলা পাকিস্তানের ইতিহাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো স্থাপনায় সবচেয়ে বড় রক্তাক্ত হামলা। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর আগ্রাসনের পর থেকেই প্রতিবেশী পাকিস্তান একের পর এক বোমা হামলায় রক্তাক্ত হচ্ছে।
কোয়েটার হামলা ছিল এগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিকতম। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানের তালেবান এবং সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) উভয়ই। তবে দাবির বস্তুনিষ্ঠতা নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা যায়নি। সোমবার রাতের হামলার স্থান ‘বেলুচিস্তান পুলিশ কলেজ’ প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটার কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কয়েক ঘণ্টা ধরে বন্দুকধারীরা একাডেমি দাপিয়ে বেড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাতে কোয়েটার দক্ষিণ-পশ্চিমের ওই পুলিশ একাডেমিতে তিনজন বন্দুকধারী ঢুকে নতুন নিয়োগ পাওয়া পুলিশ ক্যাডেটদের রাতযাপনের ভবনগুলোকে নিশানা বানায়। প্রায় ৭০০ জন থাকার উপযোগী ভবনগুলো। অস্ত্রধারীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভবনে ঢুকতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে ক্যাডেটরা পালাতে শুরু করেন। আর্সেলান নামের এক ক্যাডেট বলেন, ‘রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। আমরা বসে তাস খেলছিলাম। হঠাৎই শুরু হলো গুলিবর্ষণ। শব্দ শুনে আমরা বিছানার নিচে লুকিয়ে পড়ি।’ আরেক ক্যাডেট বলেন, ‘দেখলাম মুখ ঢাকা ছদ্মবেশী তিন লোক। তাদের সঙ্গে কালাশনিকভ রাইফেল। গুলি করতে করতে তারা ভবনে ঢুকছিল।
একটি দেয়াল টপকে আমি পালাতে সক্ষম হই।’ বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র আনওয়ারউল্লাহ কাকার এএফপিকে বলেন, হামলায় ৬০ জন নিহত ও ১১৮ জন আহত হয়েছেন। তবে হাসপাতাল থেকে দেওয়া নিহতদের তালিকায় ৬১ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কোনো হামলাকারী রয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। হামলার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার ওই একাডেমি ও এর সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এলাকায় টহল দেন নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা কোয়েটার প্রধান হাসপাতালে ভিড় করেন। বেলুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেন, হামলাকারী ছিল মাত্র তিনজন। হামলাকারীরা প্রথমে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে থাকা প্রহরীর ওপর গুলি চালায়। গুলিবিনিময়ে তিনি প্রাণ হারানোর পর তারা অ্যাকাডেমির ভেতরে প্রবেশ করে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ আরও বলেন, আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে দুই হামলাকারী নিজেদের উড়িয়ে দেয়। অপরজন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। হামলার পরপরই পাল্টা অভিযানে নামে আধা সামরিক সীমান্তবাহিনী। অ্যাকাডেমিতে আটকে পড়া কয়েক শ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী মেজর জেনারেল শের আফগান হামলার জন্য জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-জাংভিকে (এলইজে) দায়ী করেন। কর্মকর্তারা জানান, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা পাল্টা অভিযানকালে বন্দুকধারীরা বেশ কিছু ক্যাডেটকে জিম্মি করে। আর হামলায় নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশ ক্যাডেট। এলইজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানি তালেবান এক ই-মেইল বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, মোল্লা দাউদ মনসুরের নির্দেশনায় তাদের চারজন যোদ্ধা এ হামলা চালিয়েছে। সম্প্রতি পাঞ্জাবে লস্কর-ই-জাংভির সদস্যদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার ঘটনার দিকে দৃশ্যত ইঙ্গিত করে এতে আরও বলা হয়, পাঞ্জাবের কারাগারগুলোর বাইরে তাদের মুজাহিদদের নির্বিচারে হত্যার প্রতিশোধ এ হামলার ঘটনা। অন্যদিকে, আইএসের নিজস্ব বার্তা সংস্থা আমাকের মাধ্যমে এই জঙ্গি সংগঠনটিও এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। এ-সংক্রান্ত একটি ছবিও প্রকাশ করেছে তারা। বলেছে, তাদের তিন সদস্য হামলায় অংশ নেয়।

No comments

Powered by Blogger.