নৌযান শ্রমিকদের ন্যায়সংগত দাবি বিবেচনায় নিন

মজুরি বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকেরা গত মঙ্গলবার থেকে লাগাতার ধর্মঘট করায় সারা দেশে লাখ লাখ যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে দক্ষিণের নৌপথনির্ভর এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নৌবন্দরে পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘটে থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া জনজীবনে পড়তে শুরু করেছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, নৌযান শ্রমিকেরা আগাম নোটিশ না দিয়ে ধর্মঘটে গিয়েছেন। মালিকপক্ষ বলেছে, নৌযান শ্রমিকেরা বেআইনিভাবে ধর্মঘটে নেমেছেন। শ্রমিকেরা বলছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। ঈদুল আজহা সামনে রেখে এই ধর্মঘট কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শ্রমিকদের দাবি যতই ন্যায়সংগত হোক, তা আদায়ের জন্য তাঁরা যাত্রীসাধারণকে জিম্মি করতে পারেন না। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে দুই দফা ধর্মঘট কেবল অযৌক্তিক নয়, স্বেচ্ছাচারিতাও বটে।
তবে এ ব্যাপারে নৌযান মালিকদেরও দায় আছে প্রতিবার শ্রমিকেরা ধর্মঘটে গেলেই তাঁরা নড়েচড়ে বসেন; তার আগে রা নেই। নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি চললেও সংকট নিরসনে মালিক বা সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেই। এটি খুবই উদ্বেগজনক। শ্রমিকদের ন্যায়সংগত দাবি যেমন মালিকপক্ষ উপেক্ষা করতে পারে না, তেমনি নদীপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ এবং নৌপথের নাব্যতা বাড়ানোর যে দাবি তাঁরা করেছেন, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকেই। নৌপথে অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে আসবেন, এটা সবাই আশা করে। মনে রাখতে হবে, এক দিনের নৌযান ধর্মঘটে লাখ লাখ যাত্রীর দুর্ভোগের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতিও কম নয়। সমস্যা সমাধানে যত বিলম্ব হবে, ক্ষতির পরিমাণও তত বাড়বে। অনতিবিলম্বে নৌযান ধর্মঘটের অবসান ঘটাতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.