কাশ্মীরে পাথরের জবাবে বুলেট

‘এই সেই বুলেট, যার আঘাতে আমার ছেলে মারা গেছে।’ তামার একটি কার্তুজ হাতে কথাগুলো বলছিলেন আবদুল রেহমান মীর। তিনি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরের বাসিন্দা। গত মাসে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা কাশ্মীরে যেসব লোক প্রাণ হারিয়েছেন, আবদুল রেহমান মীরের ছেলে শাবির আহমেদ মীরও তার মধ্যে রয়েছেন। নিজের বাড়িতে বসে আবদুল রেহমান তাঁর ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি বর্ণনা করছিলেন, ‘এক মাস আগে এই বাড়িতেই অভিযান চালায় পুলিশ। বাড়ির ভেতর তারা কাঁদানে গ্যাসের গ্রেনেড ছোড়ে। দরজা-জানালা ভেঙে ফেলে।’ তিনি বলেন, ‘তারা ওকে টেনেহিঁচড়ে বাগানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।’ তবে কাশ্মীরের রাজ্য সরকার আবদুল রেহমানের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পুলিশের ওপর পাথর ছুড়তে থাকা একদল তরুণকে নিয়ন্ত্রণ করার সময় শাবিরের মৃত্যু হয়।
বিবিসি অনলাইনে গতকাল সোমবার সরেজমিন এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন থেকেই স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে আসছেন এই ভূখণ্ডের অধিবাসীরা। এবারের সহিংসতার সূত্রপাত বুরহান মোজাফফর ওয়ানি নামের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী তরুণ নেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। গত ৮ জুলাই পুলিশের এক অভিযানে ২২ বছর বয়সী এই তরুণের মৃত্যু হয়। অশান্ত হয়ে ওঠা কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মুঠোফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়, কারফিউ জারি করে। সহিংসতায় গত এক মাসে কাশ্মীরে ৬০ জনের মতো লোক প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচ সহস্রাধিক। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় দেখা গেল, পুলিশ লাইন লক্ষ করে এক কিশোর পাথর ছুড়ছে।
তার চোখ দুটি ছাড়া পুরো মুখ কাপড়ে ঢাকা। এক পুলিশ সদস্য নিজের ঢাল দিয়ে পাথরটি ঠেকালেন। অন্য এক পুলিশ সদস্য জবাবে একটি পাথর ছুড়লেন। বিষয়টির ব্যাখ্যায় কমান্ডার রাজেশ যাদব বলেন, ‘এই কৌশলে উত্তেজিত জনতাকে দূরে রাখা যায়। এ ছাড়া আমরা নাইন এমএম পিস্তল ব্যবহার করি, যাতে যতটা সম্ভব কম মানুষকে কম আঘাত করে পিছু হটিয়ে দেওয়া যায়।’ তবে কমান্ডার যাদবের অস্ত্রভান্ডারে শক্তিশালী গুলতিজাতীয় অস্ত্র ও রাইফেল ছাড়াও কাঁদানে গ্যাস, পিপার স্প্রে, রাবার বুলেট ও শটগান রয়েছে। শহরের মূল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, সবগুলো ওয়ার্ডই রোগীতে ভর্তি। বয়সে তরুণ এসব রোগীর অনেকের চোখে কালো চশমা। আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাঁরা। অনেকের আঘাত গুরুতর। এক চিকিৎসক বললেন, ‘চোখে কালো চশমা পরা তরুণদের অনেকেই দৃষ্টিশক্তি হারাতে চলেছেন।’

No comments

Powered by Blogger.