কাশ্মীর নিয়ে ভারতে জোর তৎপরতা

ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের শ্রীনগরে কারফিউ
চলাকালে জনশূন্য এক সড়কে সতর্ক পাহারায় একজন
পুলিশসদস্য। গতকাল তোলা ছবি। রয়টার্স
আফ্রিকার চার দেশ সফর করে দেশে ফিরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করলেন। উপত্যকার সব মানুষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তিনি আবেদন জানিয়েছেন। কাশ্মীর পরিস্থিতির কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তাঁর আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন। হিজবুল মুজাহিদীন নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর গত শনিবার থেকে উপত্যকার বিস্তীর্ণ এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন গতকাল মঙ্গলবার মারা যাওয়ায় গত চার দিনে সাধারণ নাগরিক, পুলিশসহ নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০। আহত সাড়ে তিন শর বেশি।
মঙ্গলবার উপত্যকা থমথমে থাকলেও নতুন করে সহিংসতা ছড়ায়নি। গতকালের বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, সোমবার থেকেই হিংসার তীব্রতা কমতে শুরু করেছে, তবে কারফিউ জারি রাখা হচ্ছে। আগামীকাল পরিস্থিতির অবনতি না হলে রেশন দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হবে। দিনের বেলায় জায়গা বিশেষে কারফিউও শিথিল করা হতে পারে। খোলা হতে পারে ইন্টারনেট পরিষেবাও। চালু হতে পারে ট্রেন চলাচল। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বলেন, পাকিস্তান এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে।
রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন। জঙ্গিরাও সীমান্ত পেরিয়ে উপত্যকায় ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে। সীমান্তরক্ষীদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আজই (মঙ্গলবার) তিন অনুপ্রবেশকারীকে মেরে ফেলা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলায় যথাসম্ভব কম বলপ্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই বৈঠকে অমরনাথ যাত্রা নিয়েও আলোচনা হয়। সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, যে দুই জায়গা থেকে যাত্রা শুরু হয়, সেখানকার ও যাত্রাপথের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা হয়েছে। রাজ্য সরকার চায় যাত্রা অব্যাহত রাখতে। কারণ, তা না হলে এটাই প্রমাণিত হবে যে রাজ্য সরকার ও প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ। সরকার অবশ্য মনে করে, যাত্রাপথ ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় স্থানীয় মুসলমানেরাই সচেষ্ট। কারণ, এই যাত্রার ওপরেই নির্ভর করে স্থানীয় দরিদ্র মুসলমানদের সারা বছরের রোজগার।
কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে সরকার ইতিমধ্যেই বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে। রাজনাথ সিং আলোচনা করেছেন ওমর আবদুল্লাহ, সোনিয়া গান্ধী ও সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে। ১৮ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। সেখানে বিরোধীরা অবশ্যই কাশ্মীর পরিস্থিতি তুলবেন। গতকালের বৈঠকের পর জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ফের একবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, তাঁর উচিত ছিল ভিডিও কনফারেন্স মারফত এই বৈঠকে যোগ দেওয়া। মেহবুবা বা তাঁর বিধায়কেরা কেউই বিক্ষোভকারীদের প্রশমিত করতে রাস্তায় নামেননি বলে সোমবার তাঁদের সমালোচনা করেছিলেন ওমর।

No comments

Powered by Blogger.