টেরেসার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ

লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে
বেরিয়ে যাচ্ছেন টেরেসা মে। আজ তাঁর যুক্তরাজ্যের
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার কথা। রয়টার্স
নাটকীয়ভাবে আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন টেরেসা মে। যতটা সহজে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেন, দেশ চালানো তাঁর জন্য ততটাই কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গণভোটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দলীয় বিভক্তি নিরসন, অবনতিশীল অর্থনীতির লাগাম টেনে ধরা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণসহ ইইউর সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্নির্ধারণের কাজটি তাঁকেই করতে হবে। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিরোধী দলগুলোর মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিজের পরিকল্পনা, নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন এবং ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ভাবনার সুযোগও হয়নি টেরেসার। তাঁর প্রথম মন্ত্রিপরিষদে ইইউর পক্ষের-বিপক্ষের এমপিদের যুক্ত করে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের বিভাজন নিরসনের চেষ্টা থাকবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গতকাল মঙ্গলবার তাঁর মন্ত্রিসভার সর্বশেষ বৈঠক করেছেন। আজ বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি শেষ করে বিকেলে রানির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন তিনি। এর পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন টেরেসা মে। তবে গতকাল মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের মালামাল সরাতে ভ্যানগাড়ির আনাগোনা শুরু হয়। ইইউর পক্ষে প্রচার চালালেও নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন, ‘ইইউ থেকে বিচ্ছেদ মানে বিচ্ছেদ। যুক্তরাজ্য কোনোভাবে ইইউর সদস্য থাকবে না এবং স্বার্থের সর্বোচ্চটুকু নিশ্চিত করেই যুক্তরাজ্য ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ করবে।’ টেরেসার এমন বক্তব্যের পর ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রভাবশালী নেতা আঙ্গেলা ম্যারকেল গতকাল মঙ্গলবার জার্মানিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন,
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণের কাজটি সহজ হবে না। যুক্তরাজ্য যদি ইইউর মুক্তবাজার ব্যবস্থার সুবিধা নিতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের মুক্ত চলাচলের অধিকারসহ মৌলিক নীতিগুলো মেনে নিতে হবে। এদিকে, দ্রুত একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলেছে গ্রিন পার্টি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট দল। গৃহবিবাদে অস্থির প্রধান বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিনের সমর্থকেরাও এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। বিরোধী দল লেবার পার্টির গৃহবিবাদ মারাত্মক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। জেরেমি করবিনের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা অ্যাঙ্গেলা ইগলের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন ক্ষুব্ধ করবিন সমর্থকেরা। তাঁকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। জেরেমি করবিন পুনরায় নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে গতকাল দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে করবিন সমর্থকদের জড়ো হওয়ার আশঙ্কায় ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়। এ অবস্থায় করবিন তাঁর সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
লেবার দলের তৃণমূল সদস্যদের বিপুল সমর্থন নিয়ে করবিন মাত্র নয় মাস আগে নেতা নির্বাচিত হন। কিন্তু দলের এমপিরা শুরু থেকেই তাঁর নেতৃত্বের বিরোধিতা করে আসছেন। সর্বশেষ অ্যাঙ্গেলা ইগল ৫১ জন এমপির সমর্থন নিয়ে করবিনের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন। এতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লেবার দলকে নতুন করে নেতা নির্বাচন শুরু করতে হচ্ছে। কিন্তু ওই নির্বাচনে করবিনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে চলছে তুমুল উত্তেজনা। দলের তৃণমূল সদস্যরা করবিনকেই নেতা হিসেবে চাচ্ছেন। আর এমপিরা চাচ্ছেন করবিনের পুনরায় প্রার্থী হওয়া ঠেকিয়ে দিতে। অ্যাঙ্গেলা ইগলের নির্বাচনী এলাকার লেবার সদস্যরাও করবিনের প্রতি তাঁদের সমর্থন ঘোষণা করে অ্যাঙ্গেলার এমপি মনোনয়ন বাতিলের দাবি তুলেছেন। করবিনবিরোধীরা চাচ্ছেন, নতুন নেতা নির্বাচন করে তবেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলবেন।

No comments

Powered by Blogger.