‘বাংলাদেশি পন্থা’ বলে কিছু নেই

জুলাইয়ের ১ তারিখে ঢাকার আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক পাড়া গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় ২১ জনের (জঙ্গি ও পুলিশ ছাড়া) মৃত্যু বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি অভূতপূর্ব ও দুঃখজনক ঘটনা। আবারও ইসলামিক স্টেট হামলার দায় স্বীকার করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সেই পুরোনো বাগাড়ম্বর চালিয়েই যাচ্ছে, দেশে কোনো বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী নেই। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষকই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আরও স্পষ্ট ও নতুন মনোভঙ্গি গ্রহণের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন, যাতে দেশের মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেক ধাঁধার উত্তর তো পাওয়াই যায়নি, উপরন্তু ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় আরেকটি হামলার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। এটা ঠিক যে সব প্রশ্নের উত্তর পেতে আরও সময় লাগবে। কিন্তু দুটি ঘটনা আমলে নিয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারি। প্রথমত, সন্ত্রাসী হামলার কৌশল ও ধরনে কোনো ‘বাংলাদেশি পন্থা’ নেই। একের পর এক ধর্মনিরপেক্ষ লেখক ও চিন্তকেরা খুন হওয়ার পর কিছু বিশ্লেষক এসবের মধ্যে ‘ব্যতিক্রম’ খুঁজে পেলেন। বড় হামলার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি না হলেও এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মিল আছে, যাঁদের হত্যা করা হয়েছে তাঁদের ইসলামবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
ইসলামি চরমপন্থায় রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের ‘বিরোধিতাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার’ নীতিকে বাংলাদেশে ‘সন্ত্রাসবাদের নতুন রূপ’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। দৃশ্যত, এ ধরনের যুক্তি বাংলাদেশ সরকারের বাগাড়ম্বরের পক্ষেই যায়: আইএস ও আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়, দেশীয় গোষ্ঠীই এসব জিহাদি হামলা চালাচ্ছে। এ যুক্তির বিষয়টি মাথায় রেখেই এ দুটি হামলাকে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের হামলার সঙ্গে একই কাতারে ফেলতে হবে, যেগুলো করে হয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন, না হয় তাদের অনুপ্রেরণাতেই তা সংঘটিত হয়। পরিণামে বাংলাদেশ সরকারকে শেষমেশ এটা স্বীকার করতে হবে যে আন্তর্জাতিক জিহাদি আন্দোলন দেশে এসে পৌঁছেছে।দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ সরকার এখনো সময়মতো কাজ করার জন্য প্রস্তুত নয়। অপারেশন থান্ডারবোল্ট শুরু হয় আক্রমণের ১০ ঘণ্টা পর। এই বিলম্বিত (সফল) প্রতিক্রিয়ার কারণ নানাবিধ ও জটিল হতে পারে—দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা, সামরিক-বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার ঘাটতি, রসদ ও সামরিক সরঞ্জামের ঘাটতি। শেষমেশ বলা যায়, সময় এসেছে, বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক জিহাদি আন্দোলনের হুমকি মোকাবিলা করতে হবে, আর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে হবে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
সিগফ্রিড ও উলফ: জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক।

No comments

Powered by Blogger.